দিল্লি পেরেছে, গুজরাত পেরেছে। এমনকী, প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার পরিবহণেও রয়েছে ‘কম্প্রেস্ড ন্যাচারাল গ্যাস’ বা সিএনজি-র মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার। তা হলে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গই বা কেন পিছিয়ে থাকবে, তা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীরা। সোমবার কলকাতায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে মামলা দায়ের করা হল জাতীয় পরিবেশ আদালতের (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল) বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে। আদালত তা গ্রহণও করেছে।
কলকাতায় বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রা। তবু পরিবহণ ক্ষেত্রে ‘কম্প্রেস্ড ন্যাচারাল গ্যাস’ (সিএনজি) বা কোল-মিথেন গ্যাসের মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার হবে না কেন, এই প্রশ্ন তুলে মামলা দায়ের করার আর্জি জানান পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর সওয়াল শুনে মামলাটি গ্রহণ করে আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৫ সেপ্টেম্বর।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা জানান, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা তাঁরাও জানেন। পাইপলাইন না থাকাতেই এ রাজ্যে সিএনজি-র মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি মেলে না। জ্বালানির সরবরাহ থাকলে রাজ্যের এই জ্বালানি চালু করতে আপত্তি নেই।
বছর দুই আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বায়ুদূষণে দেশের মহানগরীগুলির মধ্যে কলকাতা দ্বিতীয় স্থানে। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো অসুখ বাড়বে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছিল। পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, ডিজেল, পেট্রোলের মতো জীবাশ্ম-জ্বালানির ভিতরে কার্বন ও সালফার থাকে। ফলে এই জ্বালানি পুড়ে যে ধোঁয়া বেরোয়, তা থেকে কার্বন মনোক্সাইড এবং সালফার-ডাই-অক্সাইডের মতো দূষিত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘অনেক সময়ে গ্যাসের পাশাপাশি পোড়া কার্বন কণাও ছড়ায়। তেল দূষিত হলে সিসার মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই দূষণ ঠেকাতে সিএনজি বা কোল বেড মিথেনের মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
একই কথা মানছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারাও। এক শীর্ষকর্তা বলছেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু আমাদের এখানে তার জোগান না থাকলে কী করে চালু করা হবে!’’ একই সুর পরিবেশ দফতরের এক পদস্থ কর্তার গলাতেও। তিনি বলছেন, ‘‘দিল্লিতে পাইপলাইন বসিয়ে সিএনজি পাঠানো হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কপালে এখনও তা জোটেনি। এ রাজ্যে সিএনজি সরবরাহ শুরু হলে পরিবহণ দফতর নিশ্চয়ই তা চালু করবে।’’
আদালতের বাইরে সুভাষবাবু জানান, ২০০৭ সালে গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (গেল) দেশে সিএনজি সরবরাহের জন্য পাঁচটি পাইপলাইন তৈরি করবে বলে জানিয়েছিল। তার মধ্যে চারটি পাইপলাইন শেষ হলেও উত্তরপ্রদেশের জগদীশপুর থেকে এ রাজ্যের হলদিয়া পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো হয়নি। গেল অবশ্য জানিয়েছে, ২৫ জুলাই বিহারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জগদীশপুর-হলদিয়া ২০৫০ কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। তা শেষ হলে পশ্চিমবঙ্গেও সিএনজি পৌঁছে যাবে।
সুভাষবাবুর অবশ্য দাবি, এ রাজ্যে ‘কোল বেড মিথেন’ গ্যাসের উৎস রয়েছে। দুর্গাপুর-আসানসোলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থাও রয়েছে। ফলে প্রশাসনিক সদিচ্ছা থাকলে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরেও তা পাওয়া সম্ভব।