শুক্রবার রেড রোডের কার্নিভালে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
গত বছর রেড রোডে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে ছোঁয়া লেগেছিল আন্তর্জাতিকতার। ইউনেস্কোর বিশেষ তকমা পেয়েছিল কলকাতার দুর্গাপুজো। তার ফলে পুজো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ আরও বেড়েছে পুজো কার্নিভাল নিয়ে। শুক্রবার রেড রোডের কার্নিভাল ঘিরে তাই সাজো-সাজো রব প্রশাসনে। অসুস্থতার জন্য গৃহবন্দিত্ব কাটিয়ে ওই দিনই আবার প্রকাশ্যে বেরোবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর পায়ের আঘাতের কারণে কার্নিভালের মূল মঞ্চের উচ্চতা খানিকটা কমানো হচ্ছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
কবে?
শুক্রবার। পুজোর আগে থেকেই রেড রোডে কার্নিভালের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার বিজয়া দশমী শেষ হতে না হতেই চূড়ান্ত তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ত দফতরের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী গ্যালারি এবং চেয়ারের দর্শকাসন। ২০২০ এবং ২০২১ সাল কোভিড সংক্রমণের কারণে কার্নিভাল বন্ধ ছিল। ২০২২ সাল থেকেই আবার শুরু হয়েছে কার্নিভাল।
কত পুজো কমিটি অংশ নেবে?
কলকাতার ১০০টি পুজো কমিটিকে কার্নিভালে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ২০২২ সালেও এই একই সংখ্যায় পুজো কমিটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। শেষ মূহূর্তে একটি পুজো অংশ না নেওয়ায় ৯৯টি পুজো কার্নিভালে অংশ নেয়। নবান্ন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সব পুজো কমিটিই কার্নিভালে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। তাই ১০০টি পুজো কমিটি ধরেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসনিক বিধি কী?
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১২টার মধ্যে পুজো কমিটিগুলিকে রেড রোডের কাছাকাছি আসতে হবে। প্রতিটি পুজো সর্বাধিক তিনটি ট্রেলার বা ট্যাবলো নিয়ে যেতে পারবে। শোভাযাত্রায় সর্বাধিক ৫০ জনকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কোনও উপহার আনা বারণ।
মঞ্চের উচ্চতা কম
বিদেশ সফরে গিয়ে পাযে আঘাত পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই এ বার পুজোয় তিনি উদ্বোধন করেছেন কালীঘাটের দফতরে বসে ভার্চূয়াল মাধ্যমে। কার্নিভাল উপলক্ষে দীর্ঘ দিন পর মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির বাইরে কোনও কর্মসূচিতে যোগদান করবেন। তাঁর পায়ের আঘাতের কথা ভেবে তাঁর বসার মঞ্চের উচ্চতা কম রাখা হচ্ছে।
কোন পথে কার্নিভাল?
বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে শুরু কার্নিভাল। হেস্টিংসের দিক থেকে পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারিতে একে একে রেড রোডে ঢুকবে পুজো কমিটির ট্যাবলোগুলি। রেড রোড হয়ে সেগুলি যাবে ইডেন গার্ডেন্সের দিকে। যাতে সহজে গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন সম্ভব হয়। কোনও পুজো কমিটি চাইলে সেখান থেকে ট্যাবলো নিজেদের ঠিক করা ঘাটে বা এলাকায় নিয়ে যেতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা করবে পুলিশ-প্রশাসনই।
কত মানুষ আসবেন?
গত বছর প্রায় ১৫ হাজার মানুষ রেড রোডের অস্থায়ী গ্যালারিতে বসে কার্নিভাল দেখেছিলেন। এ বার সেই আসনসংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রেড রোড এলাকার বাইরেও বহু মানুষ কার্নিভাল দেখতে আসবেন বলে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমান।
বিশেষ বাস
কলকাতা ও শহরতলির বাসিন্দাদের কার্নিভাল শেষে বাড়ি ফেরার জন্য ১৩টি বাস চালানো হবে। বাসগুলির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে কলকাতা পুলিশ। বিকেল ৩টের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বাস স্ট্যান্ডে বাসগুলি চলে যাবে। দিনে দু’টি এস-৫ বাস চলবে এসপ্ল্যানেড-গড়িয়ার মধ্যে। জোড়া এস-১২ বাস চলবে এসপ্ল্যানেড-নিউ টাউনের মধ্যে। দু’টি এস-৯এ বাস চলবে এসপ্ল্যানেড-ডানলপের মধ্যে। হাওড়া-গড়িয়ার মধ্যে চলাচল করবে এক জোড়া এস-৭ বাস। একটি এসি-৬ বাস চলবে হাওড়া থেকে ইডেন গার্ডেন্স হয়ে গড়িয়া পর্যন্ত। দু’টি এস-২৪ বাস চলবে এসপ্ল্যানেড-পাটুলির মধ্যে। দু’টি ই-১ বাস চলবে এসপ্ল্যানেড-যাদবপুরের মধ্যে। এস-১০ নম্বরের দু’টি বাস চলবে এয়ারপোর্ট থেকে নবান্ন পর্যন্ত। একটি এস-১২ডি বাস চালানো হবে এসপ্ল্যানেড থেকে ঠাকুরপুকুরের মধ্যে। আমতলা থেকে এসপ্ল্যানেডের মধ্যে দু'টি এসি-৫২ বাস চালু থাকবে ওই সময়ে। এসপ্ল্যানেড-গড়িয়ার মধ্যে আরও দু’টি এসি-৫ বাস চালানো হবে। এসপ্ল্যানেড থেকে বেহালা পর্ণশ্রী পর্যন্ত একটি ই-৪ বাস চালানো হবে।
মেট্রো ও ট্রেনে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা
কার্নিভাল দেখার পর দর্শকদের বাড়ির ফেরার জন্য কবি সুভাষ থেকে দক্ষিণেশ্বর রুটে মেট্রো পরিষেবা মধ্যরাত পর্যন্ত চালু রাখার আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার। মধ্যরাতে এসপ্ল্যানেড থেকে উত্তর ও দক্ষিণমুখী এক কিংবা দু’জোড়া বাড়তি রেক চালানো হতে পারে। হাওড়া এবং শিয়ালদহ থেকে শেষ লোকাল ট্রেনের সময়সীমা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। পূর্ব রেলের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে নবান্ন।