(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কথায়-কথায় পরস্পরের বিরুদ্ধে তাল ঠোকে নবান্ন এবং রাজভবন। এমনকি, প্রকাশ্যেই একে অপরের সমালোচনা করে রাজ্যের দু’টি প্রতিষ্ঠান। যদিও মুখোমুখি সৌজন্যেও কোনও ঘাটতি কখনও দেখা যায় না। সিভি আনন্দ বোস কলকাতার রাজভবনে থিতু হওয়ার পর একটিমাত্র কর্মসূচিতেই সহমত হয়েছিল নবান্ন এবং রাজভবন। রাজ্যপালের বাংলা ভাষায় হাতেখড়ি। তার পর থেকেই দু’পক্ষের পরস্পর বিরোধিতার ইতিহাস লেখা শুরু হয়েছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা— নবান্ন তথা রাজ্য প্রশাসনের সমালোচনা করেছে রাজভবন। আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নাম না-করে রাজ্যপালকে বিঁধেছেন। এই সেদিনও দেবীপক্ষে বিধানসভার বিল পাশ নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল রাজভবন-নবান্ন।
যুধুধান সেই দুই শিবিরকে ‘এক’ করে দিলেন মা দুর্গা। যেখানে নবান্ন এবং রাজভবনের বিচারে কলকাতার তিনটি পুজো সেরার শিরোপা পেয়েছে। পুরস্কৃত হয়েছে রাজ্য সরকার এবং রাজভবন— উভয়পক্ষেরই বিচারে।
টালা প্রত্যয়ের এ বছরের মণ্ডপ। —নিজস্ব চিত্র।
প্রথম, উত্তর কলকাতার সেই পুজোটির নাম ‘টালা প্রত্যয়’, দ্বিতীয়, নেতাজি কলোনি (লো ল্যান্ড) ও তৃতীয় কল্যাণী আইটি পার্ক লুমিনাস ক্লাবের পুজো। ওই তিনটি পুজোই নবান্ন-রাজভবনকে সহমত করার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের বিচারেই পুরস্কৃত হয়েছে এই পুজোগুলি। তবে পুজোপ্রেমীদের একাংশের মতে, কোনও সংঘাতে না গিয়ে উৎকর্ষের বিচারে সহমত পোষণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং রাজ্যপাল আনন্দ উভয়েই বিরল ঐক্য দেখিয়েছেন।
গত কয়েক বছরের মতো এ বারও টালা পার্কের কাছের পুজো ‘টালা প্রত্যয়’ শারদোৎসবের মঞ্চ সাজিয়েছিল শিল্পী সুশান্ত পালের ভাবনায়। থিমের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কহন’। লোহার প্রাসাদে অপরূপ কারুকার্য। সন্ধ্যা নামতেই সেই প্রসাদে আলো-ছায়ার অদ্ভুত খেলা। এমন মণ্ডপসজ্জায় কলকাতার পুজোর অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল ওই পুজো। আমজনতার ভিড় এবং দরাজ প্রশংসা তো বটেই, ওই পুজোকে পুরস্কৃত করেছে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও। দ্বিতীয় পুজোটি চিনের বিলাসবহুল হোটেল ‘গ্র্যান্ড লিসবোয়া’র আদলে তৈরি হয়েছে তাদের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে কল্যাণীর লুমিনাস ক্লাবের পুজোয়। আর বন্ধুদল স্পোটিং ক্লাবের পুজো সেজে উঠেছিল, ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’ থিমকে বিষয় করে। ঘটনাচক্রে, নবান্ন এবং রাজভবন— উভয়েরই বিচারে পুরস্কৃত হয়েছে পুজোগুলি।
বিশ্ববাংলা শারদ সম্মান বিভাগে নবান্নের প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন পুজো ঘুরে ঘুরে দেখে তাদের পুরস্কৃত করে। গৌরবার্থে সেই প্রতিনিধিদলকে নবান্ন তথা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধিদল বলেই মনে করা হয়ে থাকে। দেবীপক্ষেই নবান্ন তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ‘টালা প্রত্যয়’কে ‘সেরার সেরা’ পুজোর তালিকায় স্থান দিয়েছিল। সঙ্গে কল্যাণীর লুমিনাস ক্লাব ও বন্ধুদল স্পোটিং বরাহনগরকেও সেই তালিকায় জায়গা দেওয়া হয়েছিল। আর বিজয় দশমীর দিন যে সেরা চারটি পুজোকে রাজভবন ‘শ্রেষ্ঠ পুজো’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, তাতে নাম রয়েছে ‘টালা প্রত্যয়’-সহ ওই দুটি পুজোর। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৩ সাল থেকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কলকাতার সেরা শারোদৎসবগুলিকে পুরস্কৃত করা শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অন্যদিকে, বাংলার রাজভবনে আসার পর এটাই ছিল রাজ্যপাল বোসের প্রথম শারদোৎসব। এ বছরের প্রথমদিকেই স্বরস্বতী পুজোয় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর বাংলাভাষা শেখায় হাতেখড়ি হয়েছিল। শারদোৎসব শুরুর আগেই কলকাতা তথা শহরতলির শ্রেষ্ঠ পুজোগুলিকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা করেছিল রাজভবন। মঙ্গলবার, বিজয় দশমীর দিন রাজভবন থেকে তাদের বিচারে শ্রেষ্ঠ পুজোর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। পুরস্কার বাবদে ওই পুজো কমিটিগুলিকে রাজভবনের তরফে দেওয়া হবে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। কেন রাজভবন ওই পুজোটিকে পুরস্কারের জন্য বিবেচিত করেছে, রাজভবনের তরফে তার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘টালা প্রত্যয়’কে আলো এবং ছায়ার সৃজনশীল ব্যবহারের জন্য ওই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কল্যাণী আইটি পার্ক লুমিনাস ক্লাবের পুজোটিকে পুরস্কৃত করার কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে তাদের জাঁকজমকপূর্ণ সজ্জা ও দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনার জন্য। বন্ধুদল স্পোর্টিং ক্লাব বরাহনগরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে তাদের পরিবেশ সচেতন ভাবনার জন্য।