পুরভোট

মাইকে বাধা, তাই ঘুরে ঘুরে অমায়িক প্রচার

সকাল হলেই বাড়ির সামনে পৌঁছে যাচ্ছেন কোনও না কোনও দলের প্রার্থী। শহর জুড়ে গত কয়েক দিন ধরে এ চিত্রই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন কলকাতাবাসী। শুনতে হচ্ছে, ‘পুরভোটে আমি আপনাদের এলাকার প্রার্থী। একটু দেখবেন।’ কেউ বা চেনা মানুষ, কোনও জন আবার একেবারেই অপরিচিত এলাকাবাসীর কাছে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৪
Share:

সকাল হলেই বাড়ির সামনে পৌঁছে যাচ্ছেন কোনও না কোনও দলের প্রার্থী। শহর জুড়ে গত কয়েক দিন ধরে এ চিত্রই দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন কলকাতাবাসী। শুনতে হচ্ছে, ‘পুরভোটে আমি আপনাদের এলাকার প্রার্থী। একটু দেখবেন।’ কেউ বা চেনা মানুষ, কোনও জন আবার একেবারেই অপরিচিত এলাকাবাসীর কাছে। অ্যাপায়নও তেমন ভাবেই। কাউকে ডেকে ভালবেসে চা-মিষ্টি-জল খাওয়ানো হচ্ছে। কাউকে আবার আধখোলা দরজায় মুখ বাড়িয়ে বলা হচ্ছে ‘দেখব’। কাকে আদর করে খাওয়াচ্ছে, তার হিসেব করেই প্রথম রাউন্ডে নিজেদের ভোটের অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন ভোট প্রার্থীরা।

Advertisement

আসলে এ বার ভোটের প্রচার শুরু করতে হয়েছে বাড়ি বাড়ি ঘুরেই। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কারণে আগামী পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ। ১৮ এপ্রিল কলকাতা পুরভোট। তাই শহরের প্রায় সর্বত্রই তৃণমূল-বাম-বিজেপি-কংগ্রেস সব দলের প্রার্থীরা সকাল সন্ধ্যায় হাজির এ পাড়া-সে পাড়ায়। ভোটের আঁচ তুলে বাজারে নেমে পড়েছেন তাঁরা।

১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা কলকাতার বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেই ফেললেন, “মাইক বাজানো নিষেধ তো কী হয়েছে? সকাল-সন্ধ্যায় সরাসরি ভোটারের কাছে যাচ্ছি। তাঁদের অভাব-অভিযোগ শুনছি।” গত কয়েক দিন ধরে সকাল ৭টা থেকে ওয়ার্ডের অলিগলিতে ঘুরছেন। বললেন, “একটা ডায়েরি নিয়ে ঘুরছি। যাঁর যা অভিযোগ লিখে বলছি, আগামীতে মিটিয়ে দেব।”

Advertisement

উল্টোডাঙায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর তথা সিপিএম নেত্রী রূপা বাগচীও সকাল থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। তাঁর কথায়, “এটা তো পুরভোট। লোকসভা-বিধানসভা নয়। কম ভোটার, কম এলাকাও। তাই ভোটারের মন বুঝতে তাঁদের কাছে যাওয়ার সুযোগ মেলে।” বড়বাজারের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিত প্রচার শুরু করেন দেরিতে। তাঁদেরও বক্তব্য, “ভোটারের বাড়ি গিয়ে প্রচার করায় অনেক সুবিধে মেলে। মাইকে তো সকলের মন বোঝা যায় না।”

ইতিমধ্যেই তৃণমূল-প্রার্থীদের সমর্থনে নেমে পড়েছেন শহরের বাসিন্দা একাধিক মন্ত্রী। ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মণীশ গুপ্ত, সাধন পাণ্ডেরা এলাকার প্রার্থীদের জেতাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। কিছু দিন আগেও বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ছিল তৃণমূলের। পুরভোটে বিজেপিকে কী ভাবে রোখা হবে, তা নিয়ে চলে সমীক্ষাও। এখন বিজেপি-র সেই ঝাঁঝ নেই বলে ধারণা তৃণমূলের। দেওয়ালে, ব্যানারে, ফেস্টুনে তাঁরাই প্রতিপক্ষের চেয়ে কয়েক যোজন এগিয়ে বলে জানান ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বর্তমান পুরবোর্ডের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। তাঁর কথায়, “লড়াইয়ের ময়দানে বিরোধীদের দেখছিই না।” যা শুনে সিপিএমের রূপা বাগচীর বক্তব্য, “দেওয়াল তো ফাঁকাই নেই। কী ভাবে লিখব? পার্টি কংগ্রেস এবং রাজ্য সম্মেলনের প্রচারে লেখা দেওয়াল তৃণমূল দখল করে নিয়েছে।”

মাসখানেকও বাকি নেই ভোটের। প্রচারে কিছুটা পিছিয়ে বিজেপি। যা হচ্ছে, তা কার্যত মুখের তরজা। যেমন তৃণমূলও বলছে, ওরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলেই ব্যস্ত। বিরোধীদের তোলা ওই সমালোচনার জবাবে বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক রীতেশ তিওয়ারি বলেন, “সবে তো মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন শেষ হল। এত তাড়াহুড়ো কীসের? ময়দানেই দেখা হবে।”

পুরভোটে মেয়র বিজেপিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “নিজেদের দলের লোক ধরে না রেখে ওরা তৃণমূলের বিক্ষুদ্ধদের দলে টানতে বেশি জোর দিয়েছিল। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।” যা শুনে রীতেশ বলেন, “যাঁদের পুরো দলটাই বিক্ষুদ্ধ রাজনৈতিক লোকদের নিয়ে তৈরি, তাঁদের মুখে ওই কথা মানায় না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement