আদালতের নির্দেশ নেই, হয়নি মেডিক্যাল বোর্ডও। তবুও পাভলভ হাসপাতালে হাওড়ার এক যুবককে ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠল।
বিশ্বজিৎ মান্না নামে ওই যুবকের মা নিজে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করলেও অন্য কয়েক জন আত্মীয় ও কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যেরা এ ব্যাপারে অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এক দল লোক প্রায় জোর করে বিশ্বজিতকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিন্তু কী ভাবে নিয়ম না মেনে ভর্তি করানো হল? হাসপাতালের কর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের একটি স্লিপ দেখিয়ে কার্যত এক রকম চাপ দিয়েই ওই যুবককে ভর্তি করানো হয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওই কাগজে বিশ্বজিৎকে ভর্তি করানোর কোনও নির্দেশ ছিল না। শুধু বলা ছিল, বিষয়টি বিচার করে দেখতে।
তা হলে কীসের ভিত্তিতে হাসপাতাল ভর্তি করল ওই যুবককে? যে ডাক্তারের অধীনে বিশ্বজিৎ ভর্তি ছিলেন, সেই আশিস মুখোপাধ্যায়ের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছে হাসপাতালের একাংশ। নিয়ম না মেনে কী ভাবে তিনি ২০ বছরের ছেলেটিকে ভর্তি করলেন? দায় এড়িয়ে আশিসবাবু বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। সুপার জানেন।’’
সুপার গণেশ প্রসাদ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের কোনও নির্দেশের কাগজ আমরা পাইনি। সম্ভবত মেডিক্যাল বোর্ড গড়েই ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছিল।’’ বোর্ডের কাগজপত্র কোথায়? কোনও জবাব মেলেনি। বিশ্বজিতের ভর্তির কাগজেও আশিস মুখোপাধ্যায় ছাড়া আর কারও সই পাওয়া যায়নি।
আদালতের নির্দেশ বা মেডিক্যাল বোর্ডের মতামত ছাড়াই যে তাঁর ছেলেকে ভর্তি করেছেন, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিশ্বজিতের মা সান্ত্বনা মান্না। কিন্তু তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে অনুমতি আদায় করেই এটা করা হয়েছে।
বিশ্বজিতের কাকিমা রূপা মান্না বলেন, গত ১১ এপ্রিল কয়েক জন লোক মারতে মারতে বিশ্বজিৎকে তুলে নিয়ে যায়। তাঁরা এবং ওর ঠাকুরমা বাধা দিতে গেলে কেউ সেটা কানে তোলেনি।
রূপাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলেটার বাবা মারা যান ২০১২ সালে। তার পর থেকেই ও খানিকটা একাকীত্বে ভুগত। মাঝেমধ্যে মানসিক অবসাদও আসত। কিন্তু তা হাসপাতালে ভর্তি করার মতো নয়। আমরা ওর মাকেও বারবার বলেছি, শোনেননি।’’ সান্ত্বনাদেবীর অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমার ছেলে, আমি যা ভাল বুঝব করব।’’
পাভলভের চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছেন, বিশ্বজিতের যে চিকিৎসার দরকার তা আউটডোরেই হয়। মানসিক হাসপাতালে ওর অবস্থার উন্নতির হবে না। মানবাধিকার কর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘২৫০ জনের জায়গায় পাভলভে ৫৫০ জন রোগী ভর্তি। নিয়ম না মেনে ভর্তি হয় বলেই এটা হচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে যে কাউকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া যাবে! সমাজের পক্ষে এটা ভয়ঙ্কর।’’