বিচার ব্যবস্থাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বাংলায় বিচার ব্যবস্থাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তবে কারা দেখাচ্ছে, তা নিয়ে সরাসরি কিছু বললেন না হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বরং রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যে এ সবে নেই, তা-ও প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারপত্রে সই করতে মঙ্গলবার তিনি গিয়েছিলেন ‘গণদর্পণ’-এর দফতরে। সেখানেই তিনি ওই মন্তব্য করেছেন।
সোমবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নামে হাই কোর্ট চত্বরেও পোস্টার পড়ে। তারও আগে তাঁকে নিয়ে দু’পক্ষের আইনজীবীদের সংঘর্ষে ধুন্ধুমার বাঁধে আদালত চত্বরেই। মঙ্গলবার বিচারপতি মান্থাকে সরাসরি বয়কটের প্রস্তাব আনেন কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবীদের একাংশ। এ সব নিয়ে গত দু’দিন নীরব ছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘‘আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনা হাইকোর্টে দেখিনি। পশ্চিমবঙ্গে বিচার ব্যবস্থাকে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বিচার ব্যবস্থাকে এ ভাবে ভয় দেখানো যাবে না।’’
কিন্তু সেই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব না। শুনেছি শাসকদল ওঁদের (বয়কটের পক্ষে থাকা আইনজীবী) প্রত্যাখ্যান করেছে। শাসকদলের অনেকেই আমাকে ভালবাসে। আমি শুনেছি, তারাও এটাকে সমর্থন করেনি।’’
সোমবার থেকেই বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁদেরকে তৃণমূলপন্থী বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। মঙ্গলবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেছেন, ‘‘আদালত চত্বরে ওই বিক্ষোভে যাঁরা ছিলেন তাঁদের প্রত্যেককেই আমি চিনি।’’
প্রসঙ্গত, বিচারপতি মান্থার হাতে এই মুহূর্তে রাজ্যের অনেকগুলি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণও। এই পরিস্থিতিতে বিচারপতি এজলাস বয়কট করার ডাক দিয়েছেন আইনজীবীদের সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের একাংশ। একটি লিখিত প্রস্তাব এনে এই ‘ফরমান’ জারি করেছে তারা। অভিযোগ, নির্দেশ যাতে কেউ অমান্য না করে তার জন্য বিচারপতি মান্থার এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা। যাঁরা ভিতরে যেতে চেয়েছিলেন, তাঁদেরও আটকে দেওয়া হয়। এমনকি বিচারপতি মান্থার নামে ‘বিচারের নামে কলঙ্ক’ লেখা পোস্টার পড়ে আদালতের দেওয়ালে এবং বিচারপতির বাড়ির কাছে। মঙ্গলবার এই সমস্ত ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করে আদালত অবমাননার রুল জারি করতে বলেছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সপ্তাংশু বসুর মতো আইনজীবীরা। যার প্রেক্ষিতে বিচারপতি মান্থা স্বতপ্রণোদিত ভাবে আদালত অবমাননার রুলও জারি করেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার বিকাশরঞ্জনদের সমর্থন করে বলেন, ‘‘বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে এক মঞ্চে থাকা নিয়ে কোনও সমস্যা দেখছি না।’’