আইনজীবীদের বিক্ষোভের জেরে থমকে যায় বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের বহু মামলার শুনানি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কলকাতা হাই কোর্টের সরকারি আইনজীবীদের প্যানেল থেকে সরিয়ে দেওয়া হল এক মহিলা আইনজীবীকে। একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তাঁর নাম যেন অবিলম্বে সরকারি প্যানেলের তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হয়। চিঠিটি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘অফিস অব লিগাল রিমেমব্রান্সার’। যাদের দফতর মহাকরণে। টাইপরাইটারে লেখে ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, এই দফতরের যিনি প্রধান সেই ‘গভর্নর’-এর নির্দেশেই নেওয়া হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত। আর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছেন জনগণের পরিষেবার স্বার্থে।
হাই কোর্টের সরকারি প্যানেল থেকে বাদ যাওয়া ওই আইনজীবীর নাম মনিকা পণ্ডিত। তিনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একজন। সরকারি প্যানেলেরও অন্যতম প্রধান আইনজীবী ছিলেন। মনিকার বিরুদ্ধে এই সরকারের লিগাল রিমেমব্রান্সারদের দফতরে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বুধবার। অর্থাৎ গত সোম এবং মঙ্গলবার হাই কোর্ট চত্বরে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে হাইকোর্টে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশের বিক্ষোভের পরের দিন।
বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সোমবার তো নয়ই, মঙ্গল এবং বুধবার রাজ্যের বহু মামলায় আইনজীবীদের অনেকেই উপস্থিত হননি বিচারপতি মান্থার এজলাসে। এমনকি, কেউ এজলাসে যেতে চাইলে, তাঁদেরও দরজার বাইরে বাধা দেওয়া হয়। যার জেরে ক্ষুব্ধ বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন। এমনকি, বিচারের কাজ ব্যহত করার অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু হাই কোর্টের আইনজীবীদের সূত্রে খবর, সেই সময় সরকারি প্যানেলের সদস্য মনিকা উপস্থিত হয়েছিলেন বিচারপতি মান্থার এজলাসে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নির্দেশ না মানার ‘শাস্তি’ই পেতে হল মনিকাকে?
এ ব্যাপারে অবশ্য সরকারি লিগাল রিমেমব্রান্সারদের দফতর থেকে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। অন্য দিকে, হাই কোর্ট সূত্রে খবর, মনিকা আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছিলেন, তিনি বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের বিষয় জানতেন না বলেই চলে গিয়েছিলেন। এবং বিচারপতির সামনে উপস্থিত হওয়ার পর জানলেও আর ফিরে আসতে পারেননি। কারণ উপস্থিত থেকেও মামলার শুনানি উপেক্ষা করে ফিরে গেলে তিনি বিচারপতিকে অবমাননার দায়ে পড়তেন। যদিও আইনজীবীকে সরকারি প্যানেল থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাওয়া হলে, তিনি ফোন ধরেননি। অন্য দিকে, লিগাল রিমেমব্রান্সারদের দফতরের প্রতিনিধির কাছে কারণ জানতে চাইলে তাঁরাও ওই চিঠির বাইরে কিছু বলতে চাননি।
চিঠিটি আইনজীবী ছাড়াও পাঠানো হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের গভর্নমেন্ট প্লিডারকেও। তাঁকে বলা হয়েছে, আইনজীবী মনিকার হাতে যে সমস্ত সরকারি মামলার দায়িত্ব রয়েছে তা যেন ফিরিয়ে নেওয়া হয় এবং সমস্ত তথ্য এবং নথি বুঝে নেওয়া হয়।