দক্ষিণ কলকাতায় রাস্তার ডিভাইডারের উপরে তারের জট। ফাইল চিত্র
আগাম নোটিস দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও আকাশ-ঢাকা কেব্ল তার সরেনি। সে কারণে গত জুনে ফের কেব্ল অপারেটর, ব্রডব্যান্ড ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে কড়া ভাষায় বার্তা দিতে হয়েছিল কলকাতা পুর প্রশাসনকে।
যার সারমর্ম ছিল— আগের নোটিসে বলা সত্ত্বেও হরিশ মুখার্জি রোডে ওভারহেড কেব্ল তার সরানোর নির্দেশ উপেক্ষা করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার কেব্ল টিভি-র পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি। ফলে ওই এলাকায় (হরিশ মুখার্জি রোড এবং হাজরা রোডের মোড় থেকে দেবেন্দ্র ঘোষ রোড) মাটির নীচ দিয়ে কেব্ল তার নেওয়ার পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
গত ১২ জুন জারি করা নোটিসে আরও বলা হয়েছিল, এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় তার না সরালে পুরসভা নিজেই তা সরিয়ে দেবে।
পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই জটিলতা কাটিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক জটিলতা একটি পুরনো প্রশ্নকে উস্কে দিয়েছে। তা হল, আকাশ ঢেকে দেওয়া তার সরাতে বার বার ঘোষণার পরেও সে কাজে গতি নেই কেন? কেন এই টালবাহানা? বিশেষ করে যখন এই ঘোষণা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাও বছর চারেক আগে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গ্রিন সিটি প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ১২৬টি পুরসভা ও ছ’টি পুর নিগম এলাকায় মাটির নীচ দিয়ে কেব্ল নিয়ে যাওয়ার ওই কাজ করা হবে। প্রাথমিক জটিলতা কাটিয়ে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে হরিশ মুখার্জি রোডে এই কাজ শুরু হলেও তার গতি মন্থর বলেই অভিযোগ। ফলে প্রকল্প কবে শেষ হবে, সেই প্রশ্নই এখন বড়। অতএব সারা শহরের মাটির তলা দিয়ে কেব্ল তার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হবে, তার উত্তর অজানাই।
তবে কেব্ল পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত এক বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার সুরেশ শেঠিয়া বলছেন, ‘‘এলাকা ধরে ধরে প্রতিদিনই কাজ হচ্ছে। এত বড় শহর একটু সময় তো লাগবেই।’’ কাজের ধীর গতি নিয়ে পুরকর্তাদের একাংশ অবশ্য কয়েকটি বাস্তব সমস্যার উল্লেখ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতার মতো পুরনো শহরে পানীয় জল, নিকাশি-সহ যাবতীয় পরিষেবার সংযোগ মাটির নীচ দিয়েই গিয়েছে। ফলে এ রকম প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভূগর্ভস্থ ‘মানচিত্র’ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দরকার। কিন্তু সেই ছবিটা পাওয়া যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই ব্যয়বহুলও বটে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের প্রশ্ন, এটা তো শুরুর থেকেই জানা ছিল। এমন তো নয় যে এই প্রকল্পের ঘোষণার পর থেকেই আচমকা মাটির নীচ দিয়ে পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি পাইপলাইন-সহ সমস্ত পরিষেবার সংযোগ ব্যবস্থা গিয়েছে! এ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রাজ্য সরকার বা পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেব্ল পরিষেবায় যুক্ত সংস্থাগুলির দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। তাতে কি সমাধানসূত্র মিলেছে? না কি সংশ্লিষ্ট বৈঠক, কেব্ল তার সরানোর ঘোষণা সবটাই রাজনৈতিক চমক বা শহরের আকাশের মুখ ঢেকে দেওয়া তারের জঙ্গল নিয়ে সাধারণ নাগরিকের অসন্তোষ দূর করার প্রয়াস?
এক পুরকর্তা বলছিলেন, ‘‘আসলে চেষ্টা করা হয় ঠিকই। কিন্তু কাজ শুরুর পরে বোঝা যায় মাটির নীচ দিয়ে অন্যান্য পরিষেবার লাইন
সরানো কতটা দুরূহ। তাই তখন কাজ পিছোতে থাকে।’’
তার মানে কি কলকাতা শহরের আকাশ এ ভাবেই তারে ঢাকা থাকবে?
তেমনটা মানতে নারাজ কলকাতা পুরসভার বিদায়ী পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমার। তাঁর কথায়, ‘‘ধীরে হলেও কাজ এগোচ্ছে। আজ না হোক, কাল মাটির উপরের সমস্ত তার সরবেই। এর কোনও বিকল্প নেই। সেটাই ভবিষ্যৎ।’’
যার পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সে ভবিষ্যৎ কবে আসবে জানা নেই। শুধু যা জানা
আছে তা হল, তার সরানোর বাৎসরিক ঘোষণার গোলকধাঁধায় কেব্ল তারও!