গরমে কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক বিমানকর্মী। প্রতীকী ছবি।
কংক্রিটের বিস্তীর্ণ জমি। কোথাও কোনও গাছের চিহ্ন নেই। থাকার কথাও নয়। ফলে ছায়াও নেই ওই এলাকায়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সরাসরি তেমনই পরিবেশে কাজ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক বিমানকর্মী।
গা-পোড়ানো রোদ কংক্রিটের মেঝেতে প্রতিফলিত হয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে শরীর। তার মধ্যেই কলকাতা বিমানবন্দরের ‘এয়ার সাইড’-এ নিরলস কাজ চলছে। পার্কিং বে-তে এসে দাঁড়ানো বিমান থেকে নেমে গরমের হলকায় ছিটকে যখন বাতানুকূল বাসে উঠে পড়ছেন যাত্রীরা, তখন ওই গরমেই বিমান থেকে তাঁদের মালপত্র নামাচ্ছেন কিছু যুবক।
টার্মিনালের যে পাশটায় বিমান এসে দাঁড়ায়, বিমানবন্দরের পরিভাষায় তাকেই বলে ‘এয়ার সাইড’। যেখানে বিমানের পার্কিং বে, ট্যাক্সিওয়ে, রানওয়ে-সহ বিস্তীর্ণ কংক্রিটের জমি, সেখানেই বিমানের সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের টিকিট পরীক্ষা করছেন উড়ান সংস্থার কর্মী-অফিসারেরা। গাড়িতে করে যাত্রীদের মালপত্র ভরা ট্রলি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন চালক। চারপাশে ঘুরে বিমান পরীক্ষা করছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। গরমেও গাড়ি নিয়ে ক্রমাগত রানওয়ে পর্যবেক্ষণ-সহ অন্যান্য কাজ করে বেড়াচ্ছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসারেরা। বিমানে জ্বালানি ভরছেন সংস্থার কর্মী-অফিসারেরা। দূরে রানওয়ের দু’পাশে দাঁড়িয়ে পাখি তাড়িয়ে চলেছেন এক দল যুবক।
জ্বালানি সংস্থার এক কর্তার কথায়, সারা দিনে দেড়শোর বেশি বিমানে জ্বালানি ভরতে হচ্ছে। বিমানের গায়ের কাছে দাঁড়িয়ে কাজ করলে এমনিতেই গরম লাগে। তার উপরে কংক্রিট থেকে ঠিকরে আসছে তাপ। উড়ান নামা এবং উড়ে যাওয়ার মধ্যে সময় পাওয়া যায় কম। উড়ান সংস্থা মাটিতে বিমানকে দাঁড় করিয়ে বেশি সময় নষ্ট করতে চায় না। এক অফিসারের কথায়, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি ফুয়েল মিটার পরীক্ষা করে জ্বালানি ভরতে হয়। ছাতা ব্যবহারের উপায় নেই। অনেকে টুপি পরেন। সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত শিফট। পরের শিফট দুপুর একটায় শুরু হয়ে রাত ন’টায় শেষ। দুটো শিফটেই এখন খুব কষ্ট।’’
অফিসারেরা জানাচ্ছেন, সারা দিন নন-এসি গাড়িতে করে বিমানবন্দরের ওই এয়ার সাইডে দাঁড় করানো বিমানে জ্বালানি ভরার কাজ করে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাঁরা ছুটিতে গেলে অনেককে পর পর দুটো শিফটেও কাজ করতে হচ্ছে।
দু’বছর ধরে বিমানবন্দরে পাখি তাড়ানোর কাজ করছেন মলয় দাস। ফোনে বলেন, ‘‘আগে এতটা কষ্ট হয়নি। এ বছর শরীরে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে।’’ পাখি-তাড়ুয়াদের শিফট শুরু ভোর সাড়ে পাঁচটায়। চলে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। পরের শিফট চলে রাত ন’টা অবধি। মলয় জানাচ্ছেন, প্রতিটি শিফটে ৯ জন থাকেন। তাঁদের বিশ্রামের জন্য নিচু অস্থায়ী ঘর বানানো রয়েছে। থাকছে পর্যাপ্ত জল ও ছাতা। যদিও তাঁদের বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায় বোমা ও গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে পাখি তাড়ানোর কাজে।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সি পট্টাভি বলেন, ‘‘এয়ার সাইডের কর্মীদের সুপারভাইজ়ারদের বলা আছে, কর্মীদের করণীয় প্রতিদিন মনে করিয়ে দিতে হবে। এই গরমে কাজ করার সময়ে নিজেকে বাঁচানোর উপায় তাঁরা নিয়মিত পালন করছেন কি না, তার উপরে নজর রাখতে হচ্ছে।’’