তৎপর ট্যাক্সিকাকু, ঘরে ফিরল ‘রাগ’ করে বা়ড়ি ছাড়া কিশোরী

ট্যাক্সি চালকের সাহসী সিদ্ধান্তেই পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে গিয়েছেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া কিশোরী। যাতে সাহায্য করেছেন হেয়ার স্ট্রিট থানার দুই এসআই লোকনাথ অধিকারী এবং শ্রাবন্তী ঘোষ।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:২৪
Share:

কিশোরীকে উদ্ধার করার পরে ট্যাক্সিচালক চন্দন সাউ। নিজস্ব চিত্র

পাশের আসনে বসা কিশোরী তাঁর থেকে মোবাইল চেয়ে ফোন করে। কথাবার্তা কানে আসায় একটু সতর্ক হন ট্যাক্সিচালক। কিন্তু তার পরেই ওই ফোনে যখন পাল্টা ফোন আসতে থাকে বারবার, আর তা ওই কিশোরী কেটে দিতে থাকে, তখন ট্যাক্সি চালক বোঝেন কিছু সমস্যা হয়েছে। তিনি এক রকম জোর করেই ওই ফোনকল রিসিভ করে জানতে পারেন, কিশোরী পালিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে!

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই অত্যন্ত তৎপরতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে পুলিশের হাতে মেয়েটিকে তুলে দেন ট্যাক্সিচালক চন্দন সাউ। তরুণীর পরিবার সূত্রের খবর, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছিল বলে তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। এতেই ‘রাগ’ করে বুধবার ঘর ছাড়ে সে। পুলিশ জানায়, ট্যাক্সিচালকের ফোন থেকে প্রেমিককে ফোন করে কিশোরী। প্রেমিক সম্ভবত তাকে বোঝায়, এমন না-করার জন্য। এতে রেগে গিয়ে ফোন রেখে দেয় সে। প্রেমিক পাল্টা ফোন করলেও কেটে দেয় বারবার। শেষে ট্যাক্সিচালক ফোন ধরে বুঝতে পারেন বিষয়টি। এর পরে তাঁর তৎপরতায় ও পুলিশি চেষ্টায় ঘরে ফেরে মেয়ে।

শহরের ট্যাক্সি চালকদের বিরুদ্ধে যাত্রী প্রত্যাখ্যান এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। কিন্তু বুধবার রাতেই গড়িয়া স্টেশনের ট্যাক্সি চালক চন্দন সাউয়ের অন্য পরিচয় দেখা গেল। বস্তুত, ওই ট্যাক্সি চালকের সাহসী সিদ্ধান্তেই পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে গিয়েছেন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া কিশোরী। যাতে সাহায্য করেছেন হেয়ার স্ট্রিট থানার দুই এসআই লোকনাথ অধিকারী এবং শ্রাবন্তী ঘোষ।

Advertisement

ট্যাক্সিচালক চন্দন সাউ জানান, বুধবার সন্ধে সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন গড়িয়া স্টেশনের কাছে। সে সময়ে এক কিশোরী এসে বলে, ‘‘কাকু, আমায় হাওড়া পৌঁছে দেবে? ট্রেন ধরতে হবে। বাড়ির সকলে অ্যাপ ক্যাব বুক করে হাওড়া স্টেশনে গিয়েছে। ফেলে যাওয়া জিনিস আনতে বাড়ি গিয়েছিলাম বলে ওই ক্যাব ধরতে পারিনি।’’ চন্দনের কথায়, ‘‘এই অবধি সব ঠিক ছিল। কিন্তু ট্যাক্সি এজেসি বসু রোড দিয়ে ধর্মতলার দিকে এগোনোর সময়ে মেয়েটা আমার মোবাইল চাইল। কাউকে ফোন করে কিছু কথা কাটাকাটি করে ফোন রেখেও দিল।’’

চন্দন জানান, এর পরেই ক্রমাগত ওই নম্বর থেকে ফোন আসতে থাকে তাঁর মোবাইলে। ফোনটি কিশোরীর হাতে থাকায় সে বারবার ফোন কেটে দেয়। সন্দেহ হয় চন্দনের। জোর করে কিশোরীর থেকে ফোন নিয়ে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। ফোনের ও-পারের ব্যক্তি চন্দনকে অনুরোধ করেন কিশোরীকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য।

পুলিশ জানায়, ওই ফোনের পরে চালক গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো দিকে যাচ্ছেন দেখে ধর্মতলার কাছে চলন্ত ট্যাক্সির দরজা খুলে ঝাঁপ দিতে যায় কিশোরী! বেগতিক দেখে ফের হাওড়ার দিকে যাওয়ার ভান করে গাড়িটি ঘুরিয়ে দেন চন্দন। এর পরেই সামনে ট্র্যাফিক পুলিশ দেখে ট্যাক্সি থামান চন্দন। পুলিশের কাছে সব খুলে বলেন। এর পরেই পুলিশি পাহারায় কিশোরীকে নিয়ে সোজা হেয়ার স্ট্রিট থানায় ঢোকে ট্যাক্সি।

কিন্তু এতেও ঝামেলা মেটেনি। পুলিশ জানায়, প্রথমে কোন সহযোগিতাই করেনি ওই কিশোরী। শুধু বলতে থাকে, সে বাড়িতে যাবে না। ঠিকানাও বলেনি কিছুতেই। এমনকী বাড়ির ফোন নম্বর পর্যন্ত ভুল বলে, যাতে পুলিশ যোগাযোগ না করতে পারে। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে বোঝানোর পরে বাড়ির ঠিকানা বলে সে। এর পরেই মধ্যরাতে কিশোরীকে নিয়ে তার সোনারপুরের বাড়িতে পৌঁছয় পুলিশের গাড়ি।

মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলছেন, ‘‘এখনকার যুগে পরিবারের সদস্যদের কাছে গুরুত্ব পেতে পেতে বাচ্চারা এক সময়ে পরিবারেরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কোনও কিছু না-পাওয়া বা মনের মতো না হওয়া পরিস্থিতি আর সামাল দেওয়া যায় না। তখনই এ ধরনের চূড়ান্ত পদক্ষেপ করে তারা। এ ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনটাই ঘটেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement