আগামীর মুখ: নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে প্রতিবাদ। সেই বিক্ষোভে শামিল হয়েছে কলকাতাও। দল ও মত নির্বিশেষে পথে নেমেছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে শনিবারও সরব রইল কলকাতা। শহিদ মিনার ময়দান থেকে মহাজাতি সদন পর্যন্ত মিছিল করলেন যাদবপুর, কলকাতা, প্রেসিডেন্সি, বিশ্বভারতী, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। মিছিল দৃপ্ত স্বরে জানিয়ে দিল— নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ‘কাগজ দেখাব না’। পাঠ করল সংবিধানের প্রস্তাবনা। স্লোগানে ঘোষণা করল— ‘তুম না দোগে আজাদি, হাম ছিন লেঙ্গে আজাদি।’
এ দিন রাজভবন অভিযান করে কংগ্রেস। নামাবলি, লুঙ্গি ও ক্রিসমাস টুপি পরে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন, ‘‘আমরা কারা? নাগরিক।’’
পড়ুয়াদের মিছিল শুরু হয় বিকেলে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে তা বিজেপির রাজ্য দফতরের কাছাকাছি পৌঁছয়। বিজেপি দফতরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন কেউ কেউ। পুলিশ আগেই নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা রেখেছিল। পথের উঁচু ডিভাইডারের উপরে গড়া হয় বাঁশের তিন সারির ব্যারিকেড। বিজেপি দফতরের গলির মুখ এবং কাছের চার মাথার মোড় বন্ধ রাখা হয়েছিল গার্ড রেল দিয়ে। মোতায়েন ছিল পুলিশ বাহিনীও। আর বিজেপি দফতরের দিকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের উপরে সারি সারি বাস, গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। মিছিল যেতে যাতে বাধা না-পায়, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা, জানিয়েছে পুলিশ। কার্যত সেগুলি বিজেপি অফিসের ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। কয়েক জন ব্যারিকেড টপকে বিজেপি দফতরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। ওখানেই প্রায় ১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে চড়া গলায় স্লোগান দিতে থাকে মিছিল। মহাজাতি সদনের আগেও প্রায় এক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন, প্রতিবাদী গান করেন পড়ুয়ারা। বিজেপি দফতরের গলির মুখে পুলিশের পিছনে ভিড় করে দাঁড়িয়ে পাল্টা স্লোগান দেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরাও। অনেকের হাতে ছিল লাঠি। এ দিন দুপুরে বাঁকুড়ায় এক সভায় দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছিলেন, বিজেপির দফতরে ঢুকতে হলে স্ট্রেচার নিয়ে যেতে হবে। তাতে করেই সরকারি হাসপাতালে ফিরতে হবে।
মিছিল চলে যাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পরে বিজেপি দফতরের সামনে এক দল লোক ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। বিজেপির অভিযোগ ছিল, পুলিশ চার-পাঁচ ঘণ্টা তাদের দফতর অবরুদ্ধ করে রাখায় নেতারা বেরোতে পারছেন না।
পড়ুয়াদের পাশাপাশি মিছিলে ছিল ভীম সেনাও। একই সঙ্গে লাল পতাকা ও জাতীয় পতাকা হাতে পড়ুয়ারা ঘোষণা করেন, ‘‘এনআরসি-সিএএ-র মাধ্যমে মানুষকে অ-নাগরিক করে দিয়ে সস্তা শ্রমিকে পরিণত করার চক্রান্ত মানা হবে না।’’