গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
অফিস থেকে সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ বেরিয়েছিলেন ওষুধ ব্যবসায়ী ভব্য লখানি। মিটিং ছিল ব্যবসায়িক এক সহযোগীর সঙ্গে। কিন্তু তার পর আর কলকাতার ভবানীপুরের ওই ব্যবসায়ীর খোঁজ পায়নি পরিবার। বুধবার তাঁকে পাওয়া গেল। তবে বস্তাবন্দি এবং মৃত অবস্থায়। শুধু তাই নয়, ভব্যের দেহের উপর রাতারাতি তুলে দেওয়া হয়েছিল পাঁচিল। উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা থানা এলাকায় দক্ষিণ কলকাতার ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার ঘিরে ইতিমধ্যে চাঞ্চল্য শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর ১টা থেকে ৩টের মধ্যে খুন হন ভব্য। ব্যবসায়িক মিটিংয়ে ডেকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য মিলেছে। অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় উইকেট দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয় ব্যবসায়ীর। সংজ্ঞাহীন হওয়ার পরেও পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন খুনিরা। তার পর উইকেটগুলো এক জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীর রক্তমাখা জামাকাপড় ছুড়ে ফেলা হয় নিমতার একটি ধাপায়। সেগুলো উদ্ধার করেছে পুলিশ। খুনের ঘটনায় দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ব্যবসায়ীর স্ত্রী নেহা লখানি থানায় অভিযোগ করেন। তিনি জানান, তাঁর স্বামীকে কেউ অপহরণ করেছেন। সোমবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড এলাকা থেকে ভব্য বেরোনোর পর তাঁর আর কোনও খোঁজ পাননি। ঘটনার তদন্তে নেমে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে বুধবার নিমতা থানার একটি বাড়ি থেকে ভবানীপুরের ওই ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার করে বালিগঞ্জ থানার পুলিশ। অভিযোগ, খুনের পর দেহ বস্তাবন্দি করে জলের ট্যাঙ্কের নীচে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। তার পর রাতারাতি তার উপর পাঁচিল তুলে দেন অভিযুক্তেরা। যে বাড়ি থেকে ভব্যের দেহ পাওয়া যায়, সেটি অনির্বাণ গুপ্ত নামে এক যুবকের। নিমতার প্রবোধ মিত্র লেনের বাসিন্দা অনির্বাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। প্রাথমিক তদন্তে তিনি খুনের কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন বলে খবর। পাশাপাশি ৩৮ বছরের সুমন দাস নামে এক যুবককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, অনির্বাণের সঙ্গে হাত লাগিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দেহ লুকোনোর চেষ্টা করেন তিনি। দু’জনকেই টানা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
খুনের কারণ হিসাবে উঠে আসছে আর্থিক লেনদেনের তথ্য। পুলিশ সূত্রে খবর, অনির্বাণের সঙ্গে ওষুধের ব্যবসা করতেন ভব্য। বেশ কিছু ওষুধ সরবরাহ করবেন বলে ভব্যের কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন অনির্বাণ। কিন্তু কোনও ওষুধই সরবারহ করেননি। টাকাও ফেরত দেননি। মনে করা হচ্ছে, ওই নিয়ে একটি ‘মিটিং’ করবেন বলে ব্যবসায়িক সঙ্গীকে নিমতার বাড়িতে ডাকেন অনির্বাণ। এ নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘অনির্বাণের বাড়িতে খুন করে ছাদের উপর জলের ট্যাঙ্কের নীচে রেখে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত অনির্বাণ মৃতের ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। ওষুধ সরবরাহের অজুহাতে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। ওই ওষুধ সরবরাহ করেননি এবং টাকাও ফেরত দেননি। ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
বুধবারই অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ২০১ এবং ৩৪ ধরায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অন্য দিকে, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে মৃতের দেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। হোমিসাইড শাখাও তদন্ত করছে।