ধর্মতলায় একটি মিনিবাসের চাকা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করছেন এক পুলিশকর্মী। মল্লিকবাজারের একটি দোকানে টায়ার রিসোলিংয়ের কাজ চলছে। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ, বিশ্বনাথ বণিক
যাত্রী-সুরক্ষায় নজর নেই! এক বার রিসোল করার ছ’মাস পরে যে টায়ার বাতিল করে দেওয়ার কথা, সেটাই টেনেটুনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেড়-দু’বছর! কখনও আরও এক বার, কখনও দু’বার বা তারও বেশি রিসোল করে কাজ চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সমান হয়ে যাওয়া টায়ার জোড়াতালি দিয়ে লাগানো হচ্ছে পিছনের চাকায়। যাত্রী-সুরক্ষার বিষয়টি উড়িয়ে বছরের পর বছর এ ভাবেই শহরের পথে ছুটছে অধিকাংশ বাস।
রবিবার ডোরিনা ক্রসিংয়ে বেপরোয়া গতিতে ছোটা একটি মিনিবাস উল্টে জখম হন ২৭ জন যাত্রী। পুলিশ সূত্রের খবর, আচমকা বাসের চাকা ফেটে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। প্রাথমিক তদন্তে রিসোল টায়ারকেও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। শুধু এই দুর্ঘটনাই নয়, গত কয়েক মাসে শহরের একাধিক ছোট-বড় বাস দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে রিসোল টায়ারকেই ‘দায়ী’ করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তার পরেও শহরের অধিকাংশ বাসের চাকার হাল একই রয়ে গিয়েছে। পুলিশি নজরদারি ও ধরপাকড় সত্ত্বেও প্রায় সমান হয়ে যাওয়া চাকা নিয়েই ছুটছে বহু বাস।
অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের খাতে খরচ কমাতে যাত্রী-সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকটি উপেক্ষিত হচ্ছে। বাসমালিকদের তরফে বার বার ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করা হলেও যাত্রী-সুরক্ষায় নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বাঘা যতীনের বাসিন্দা সৌরভ বসু বললেন, ‘‘এখন বাসে উঠতেই ভয় লাগে, প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। টায়ার থেকে বাসের কাঠামো— কিছুতেই নজর দেওয়ার কেউ নেই। এ ভাবেই চলছে দিনের পর দিন।’’
কেন এই অবস্থা? জানা গিয়েছে, এক-একটি নতুন টায়ারের দাম যেখানে ৮-১০ হাজার টাকা, সেখানে একটি টায়ার রিসোল করতে খরচ আড়াই হাজার টাকার মতো। বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পুরনো, প্রায় সমান হয়ে যাওয়া টায়ারকে ছাঁচে ফেলে খাঁজ কেটে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা হয়। তবে রিসোল টায়ারও দীর্ঘ দিন ধরে চললে তা ফের সমান হয়ে যায়। ফলে ব্রেক কষলেও গাড়ি পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে দুর্ঘটনা আশঙ্কা থাকে বলে জানাচ্ছেন শহরের রিসোল টায়ারের দোকানের কর্মী থেকে মালিকদের একাংশ। কিন্তু নতুন টায়ার কেনার খরচ বাঁচাতেই রিসোল টায়ার ব্যবহার করে মাসের পর মাস অধিকাংশ বাস ছুটছে শহরে। ট্যাক্সি থেকে শুরু করে অটো, ব্যক্তিগত গাড়ি— সব ক্ষেত্রে একই ছবি। শহরের একটি রিসোল কারখানার কর্মী মিরাজের কথায়, ‘‘এক বার টায়ার রিসোল করলে ছ’মাস ভাল ভাবে চালানো যায়। গাড়ি কম চললে সেটা এক বছরও চলতে পারে। তার বেশি চললে ঝুঁকি থেকে যায়। তবে কোনও টায়ার দ্বিতীয় বার রিসোল করলে তা কিন্তু এত দিন চলবে না। আমরা দু’বারের বেশি রিসোল করি না।’’ তবে অনেক সময়েই গাড়ির মালিকের জোরাজুরিতে দু’বারের বেশিও কোনও টায়ার রিসোল করে দিতে বাধ্য হন তাঁরা, বলছেন মিরাজ।
এ প্রসঙ্গে সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ভাড়া না বাড়ায় বেসরকারি পরিবহণের হাল তলানিতে। আয় না বাড়ায় অনেক মালিক গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছেন না। সরকারকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও উপেক্ষিত থেকে গিয়েছি।’’