সম্বল: আন্ডারপাসে আটকে পড়া বাস থেকে কোনও রকমে বেরিয়ে এসেছিলেন যাত্রী, চালক ও কন্ডাক্টর। পরে ফের ব্যাগ আনার জন্য জলে নেমেছেন চালক। বুধবার, পাতিপুকুরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
জমা জল বার করার একমাত্র ভরসা খাল। সেই বাগজোলা, কেষ্টপুর, ক্যান্টনমেন্ট, পাশ খাল, ইস্টার্ন ড্রেনেজ খাল এই মুহূর্তে টইটম্বুর। এর ফলে বুধবারের মুষলধারে বৃষ্টিতে নিয়ম মেনেই ভাসল পাঁচ নম্বর সেক্টর, নিউ টাউন, রাজারহাট-গোপালপুরের বিস্তীর্ণ অংশ এবং দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার কিছু অংশ।
এ দিনও ফের পাতিপুকুর আন্ডারপাসে জল জমে একটি বেসরকারি বাস আটকে যায়। কয়েক দিন আগে বৃষ্টির জমা জলে একটি বাস ডুবে ছিল সেখানে। দু’দিন লেগেছিল জল সরিয়ে বাস বার করতেই। এ দিন বাসটি আন্ডারপাস দিয়ে যেতে গিয়ে বিকল হয়ে যায়। কোনও মতে যাত্রী ও বাসকর্মীরা বেরিয়ে আসেন। এ দিন রাত পর্যন্ত বাসটি সরানো যায়নি।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার বেশ কিছু ওয়ার্ডও এ দিন নতুন করে জলমগ্ন হয়। ভিআইপি রোডের বাগুইআটি, কেষ্টপুর, চিনার পার্ক, হলদিরাম এলাকায় জল কোথাও গোড়ালি ডোবা, কোথাও হাঁটু সমান ছিল। দক্ষিণ দমদম পুরসভার মুখ্য প্রশাসকের দাবি, আগের দিনের মতো না হলেও কিছু জায়গায় জল জমেছে। দ্রুত জল নামানোর কাজ চলছে। স্থানীয় প্রশাসন দাবি করেছে, ম্যানহোল খুলে ও পাম্প চালিয়ে জল বার করার চেষ্টা করছে তারা। তবে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। জল নামছে ধীরেই। ফলে ভিআইপি রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তায় বুধবার গাড়ির গতি কমে যানজট হয়।
জল জমেছে সল্টলেকের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও। সুকান্তনগর থেকে কুলিপাড়া, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের পোলেনাইট জলে ভেসে গিয়েছে। এ দিন ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে একটি ফিডার বক্স থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন স্থানীয়েরা। খবর পেয়ে যান স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর মিনু চক্রবর্তী। দমকলও পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। বিধাননগরের পুর প্রশাসক কৃষ্ণা চক্রবর্তী জানান, প্রশাসন আপ্রাণ চেষ্টা করছে জল দ্রুত বার করতে। তবে কিছুটা সময় লাগবেই।
রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জল জমেছে। হাতিয়াড়া রোডের এক বাসিন্দা জানান, এ বার এমন জায়গায় জল জমছে, যেখানে আগে জল জমত না। স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় জানান, পাম্প চলছে। ম্যানহোল খুলে জল বার করার চেষ্টা হচ্ছে।
পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুকের বিভিন্ন জায়গা, নবদিগন্ত এবং নিউ টাউনের বিভিন্ন ব্লক এলাকাতেও জল জমে যায়। পেঁচার মোড় এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ সরকার বলেন, “রাস্তার ধারে নির্মাণ সামগ্রী স্তূপ করা থাকে। যা গিয়ে পড়ছে নিকাশি নালায়। ফলে জল তো জমবেই।” নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) এক আধিকারিক জানান, জল সরানোর ভরসা বাগজোলা খাল টইটম্বুর। ওই জল সরাতে কর্মী এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা কাজ করছেন। শিল্পতালুক কর্তৃপক্ষও জানাচ্ছেন, জল বার করতে পাম্প চালানো হচ্ছে।
তবে ফের বর্ষণের পূর্বাভাসে শঙ্কিত সব স্থানীয় প্রশাসন। তিন চার ঘণ্টার মধ্যে জল নামানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে তাঁরা দাবি করলেও, এমন ভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে জল বার করা যে মুশকিল হবে, মানছেন সকলেই।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে জল জমা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু, সেই জল নামছে অতি ধীরে। এর অন্যতম কারণ খাল এবং শহরের ভিতরের নিকাশি নালার যথাযথ সংস্কারের অভাব। যে কারণে বাকি বর্ষায় একই দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।