ডাক্তার পাত্র সেজে প্রতারণা, গ্রেফতার যুবক

ভাল লাগার সুযোগ নিয়েই ৭৭ হাজার টাকা হাতিয়ে চম্পট দিল পাত্র

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি

ছেলে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার! সুদর্শন। কলেজ স্ট্রিটে বাড়ি রয়েছে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এক দেখাতেই পাত্র হিসেবে সে ছেলেকে মেয়ের জন্য পছন্দ করে ফেলেছিলেন বেলেঘাটার বাসিন্দা এক মহিলা।

Advertisement

বার কয়েক সাক্ষাতের পরে মেয়েও রাজি। সেই ভাল লাগার সুযোগ নিয়েই ৭৭ হাজার টাকা হাতিয়ে চম্পট দিল পাত্র। পরে জানা গেল ডাক্তারি তো দূর, অষ্টম শ্রেণির গণ্ডিও পেরোয়নি সেই ছেলে! যার আসল নাম সঞ্জয় সিংহ। প্রতারণার ফাঁদ পাততেই নিজেকে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, দিব্যেন্দু রায় হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল সে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার শিয়ালদহ আদালতে সঞ্জয়কে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।

বেলেঘাটা থানা সূত্রের খবর, অবিনাশচন্দ্র ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা এক মহিলা গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, বেঙ্গালুরু নিবাসী মেয়ের জন্য তিনি পাত্র খুঁজছিলেন। খবরের কাগজে চিকিৎসক পাত্রের বিজ্ঞাপন দেখে ফোনে যোগাযোগ করেন। পাত্রী দেখতে মাকে নিয়ে গত বছর নভেম্বরে বেলেঘাটায় পৌঁছয় সঞ্জয়। নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেয়। জানায়, মেদিনীপুরের পাশাপাশি কলেজ স্ট্রিটেও সদ্য বাড়ি কিনেছে সে। কথাবার্তার পরে কয়েক বার বাড়ির বাইরে দেখাসাক্ষাতও হয় হবু পাত্র-পাত্রীর। বিয়ের দিনও স্থির হয়ে যায়।

Advertisement

এর মধ্যেই একদিন ফোনে সঞ্জয় জানায়, তার মা গুরুতর অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। ফোনে বলা হয়, চিকিৎসার প্রচুর খরচ। বিয়ের পরে থাকবে বলে বাড়ি কিনতে গিয়ে প্রচুর টাকা আটকে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এক লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পাত্রীর মায়ের দাবি, ‘‘৭৭ হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছিলাম। দিব্যেন্দু বলল, ওতেই হবে।’’ সেই সঞ্জয়ের মতো ‘ই ওয়ালেট’-এ (ডিজিটাল লেনদেন পদ্ধতি) টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ, টাকা পেয়েই বেপাত্তা হয়ে যায় সঞ্জয়। পাত্রের কোনও খোঁজ না পেয়ে ফেব্রুয়ারিতে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। তদন্তে নেমে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানা এলাকা থেকে গত ১২ অগস্ট গ্রেফতার করা হয় সঞ্জয়কে।

আরও পড়ুন: তালা ভেঙে মশা দমনে ‘না’ কাউন্সিলরদের

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দাসপুর থানার সুজানগরে বাবার সঙ্গে থাকে সঞ্জয়। সে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। একটি বহুজাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থায় কাজ করে। তার ফাঁকেই বিজ্ঞাপন দিয়ে পাত্র সেজে দলবল নিয়ে প্রতারণা চালায়। যে মহিলাকে মা সাজিয়ে নিয়ে এসেছিল সঞ্জয় তার খোঁজও শুরু করেছে পুলিশ।

এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযুক্তের আসল নামও জানা ছিল না। মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান দেখেই সঞ্জয়কে গ্রেফতার করা গিয়েছে। বেনামে চারটি সিমকার্ড ব্যবহার করছিল সঞ্জয়।’’ শিয়ালদহ আদালতের সরকারি আইনজীবী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই প্রতারণা-চক্রে অনেকে জড়িত। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকিদের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে।’’

মেয়ের মা মঙ্গলবার বললেন, ‘‘অত ঝকঝকে ছেলে। বুঝতেই পারিনি এরকম ঘটবে। এ বার সাবধানে পা ফেলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement