ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করতে চাইছেন। শুধু উচ্চশিক্ষা দফতর নয়, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরকেও তিনি স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। মঙ্গলবার সেন্ট জ়েভিয়ার্স কলেজের সমাবর্তনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমনই অভিযোগ তুললেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী জানান, অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে একসঙ্গে বসে আলোচনা করতে বললেও রাজ্যপাল গ্রাহ্য করছেন না। ব্রাত্যর আবেদন, রাজ্যপাল দ্বারা অপসারিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ রাজ্য সরকার এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলুন। যা শুনে বুদ্ধদেব জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে শিক্ষামন্ত্রী এমন বলে থাকলে, সেটা তিনি ভেবে দেখবেন।
এর আগে গত ৫ জানুয়ারি রাজভবন থেকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল, উপাচার্যদের নিয়োগ, পুনর্নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ, অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ, অপসারণ— সব ক্ষমতা রয়েছে রাজ্যপাল তথা আচার্যের। আরও জানানো হয়েছিল, উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগের আগে অন্তর্বর্তী উপাচার্যেরা যেন রাজভবনে কথা বলে নেন। এর পাল্টা উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে রাজভবনে পাঠানো এক চিঠিতে রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে উত্তর চাওয়া হয়। সেই বিষয়ে সাংবাদিকদের রাজ্যপাল জানান, তিনি কোনও দফতরের প্রশ্নের উত্তর দেন না। রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের আদানপ্রদান হয়। সরকার থেকে চিঠি আসুক, উত্তর দেওয়া হবে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে ফের পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, সরকারের সঙ্গে সরকারি দফতরের পার্থক্য কী? এ দিন ব্রাত্য জানান, প্রয়োজনে আবার রাজভবনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর দাবি, ‘‘শুধু উচ্চশিক্ষা দফতর নয়, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরকেও রাজ্যপাল স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। সরকারকেই তো তিনি নস্যাৎ করতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করতে চাইছেন।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অচলাবস্থা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই অচলাবস্থা কেন, কী ভাবে, কাদের কথায়, কে সৃষ্টি করেছেন— তা রাজ্যবাসী জানেন। সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর বক্তব্য, এর ফয়সালা তাঁরা চাইছেন। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘উপাচার্যকে বলব, সরকারি নির্দেশ এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে চলতে।’’ প্রসঙ্গত, রাজ্যপাল অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে অপসারণের পরে উচ্চশিক্ষা দফতর তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছিল। উচ্চশিক্ষা দফতরের সেই নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতির বদল ঘটানো যাবে না। এ দিকে রাজ্যপাল তাঁকে অপসারণ করার পরে বুদ্ধদেব কয়েক দিন দফতরে এলেও এখন আর আসছেন না।
শিক্ষামন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্য শুনে বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘রাজ্য-রাজ্যপাল আলোচনায় বসে যদি সবটা ঠিক করেন, তা হলে সব থেকে ভাল হয়। তবে অচলাবস্থা কাটানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রী যদি এমন বলে থাকেন, তা ভেবে দেখব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিরুদ্ধ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমারও তো সম্মান আছে। আমি কিন্তু বেআইনি কাজ করিনি।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অচলাবস্থার অবসান এবং স্থায়ী উপাচার্যের দাবিতে সেখানকার শিক্ষক সমিতির (জুটা) উদ্যোগে এ দিন ক্যাম্পাসে ত্রিগুণা সেনের মূর্তির পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি হয়।