সেজে উঠেছে বো ব্যারাক।—নিজস্ব চিত্র।
খ্রিস্টমাস ক্যারল থেকে জমাটি হিন্দি গান, লাল জোব্বা পড়া সান্তার জমকালো আবির্ভাব থেকে ফুটবল ম্যাচ। এই মুহূর্তে বো ব্যারাকে ব্যস্ততা রীতিমতো তুঙ্গে। বড়দিন আর নববর্ষ উপলক্ষে বুধবার থেকে শুরু হল ওখানকার সপ্তাহব্যাপী উৎসব।
প্রায় শতবর্ষপ্রাচীন বো ব্যারাক আদতে ছিল সেনা আবাস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে সেনারা চলে যাওয়ার পর আবাসগুলির চাবি তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের। এখনও ওখানকার আবাসিকদের সিংহভাগই খ্রিস্টান। তাই বছরভর কলকাতার বহু লোক তাকিয়ে থাকেন কী ভাবে তারিয়ে তারিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা এই উৎসব পালন করেন।
আরও দেখুন-বড়দিনের অপেক্ষায় জমজমাট বো ব্যারাক
বি ব্লকের ১১ নম্বর স্যুটের অ্যাসলে চ্যাং বুধবার বিকেলে ঘুরছিলেন ব্যারাকের ভিতরের রাস্তায়। পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী, ৬১ বছরের চ্যাঙের জন্ম এখানেই। বাবা ছিলেন চিনা, মা অ্যাংলো। বেশ ক’বছর ধরে হায়দরাবাদ নিবাসী। অনুষ্ঠানমঞ্চের প্রস্তুতি দেখতে দেখতে বললেন, ‘‘প্রতি বছর এ সময়টা আমার কলকাতা আসা চাই-ই।’’ একই সুর দুবাইয়ের শ্যেন রোজারিও এবং শ্যেন ডিক্রুজের। ছেলেবেলা কেটেছে এই বো ব্যারাকে। কত ফুটবল-ক্রিকেট খেলেছেন এই রাস্তায়। এখন বড়দিন আসার মাসখানেক আগে থেকে হাতছানি দিয়ে ওঁদের ডাকে বো ব্যারাক। স্মৃতিমেদুর সেই ডাক উপেক্ষা করে, কার সাধ্যি!
৮২ বছরের গ্র্যানভিল ব্লেকের বাবা ছিলেন ব্রিটিশ। মা পর্তুগিজ। গ্র্যানভিল বো ব্যারাকে আছেন ১৯৭৮ থেকে। ওঁর কাছে এ বারের বড়দিনের মাত্রা একটু অন্যরকম। ২৫শে প্রভু যিশুর জন্মদিন, আর ২৭শে ছোট নাতনির বিয়ে। বাড়িতে আত্মীয়রা এসেছেন। বললেন, ‘‘বড়দিনের এই সময়টা এত ভাল লাগে, কী বলব!’’
বড়দিনের উপহার বিনিময়, নাচ-গান, খাওয়া-দাওয়া, ক্যারল— এ সব কিছুর মধ্যে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করে বো ব্যারাক। স্লেড চলার স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বরফ না থাকুক, টানা রিকশা তো আছে! সান্তাক্লস আসবেন সেটা চড়েই। গানের তালে নাচবেনও। স্থানীয় বাসিন্দারাই কেবল নন, উৎসব দেখতে আসেন ওঁদের আত্মীয় পরিজনরাও। বহু বাড়িতেই এখন বয়স্ক বাবা-মা। ছেলেমেয়েরা অনেকেই প্রবাসী। তবে, বছরের এই সময়টা ওই প্রবাসীদের অধিকাংশই নাড়ির টানে এসে হাজির হন এখানে। ডয়সন থেকে ফেলিক্স, অ্যান্ড্রু থেকে ব্র্যাডলি উইলিয়মস, ভিনসেন্ট চেন থেকে অ্যালেন লোবো— দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না ওঁরা। নানা জায়গা থেকে লোকে আসছে বো ব্যারাক দেখতে। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা তল্লাট। যেন রঙিন সাজে সেজেছে মধ্য কলকাতায়, বৌবাজার থানার পাশের একটা ছোট্ট জগৎ।