আলোকিত: বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে সেজে উঠেছে বো ব্যারাক। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
‘‘পরের বছর ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালে এখানেরটাও থাকবে।’’— সোমবার বিকেলে বো ব্যারাকে গিয়ে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, সঙ্গে থাকা পদাধিকারীদের বিষয়টি ‘ভুলে না যাওয়ার’ কথাও বলেছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসই বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে শহরের ছোট্ট অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান পাড়াকে, বাড়তি রং জুড়েছে তাদের বর্ষবরণ উৎসবে।
মধ্য কলকাতার বৌবাজার এলাকার বো ব্যারাকে মেরেকেটে ১৩২টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা কমবেশি ৪০০। প্রতি বছর বড়দিনের আগে আলোয় সেজে ওঠে কলকাতার এই অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মহল্লা। বড়দিন উপলক্ষে ভিন্ রাজ্যে ও বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনেরাও এই সময়ে ফিরে আসেন বো ব্যারাকে। পরিবারের সঙ্গে কয়েক দিন কাটানোর পাশাপাশি উৎসবে শামিল হন।
তবে গত দু’বছর ধরে কোভিডের কারণে সেই উৎসবের রং খানিকটা ফিকে হলেও এ বার অবশ্য ভিন্রাজ্য থেকে অনেকেই ফিরতে পেরেছেন শহরে। এমনকি যাঁরা ভিন্ রাজ্যে কাজ করেন, বড়দিন উপলক্ষে তাঁরাও বো ব্যারাকের ঘরে ফিরেছেন। তবে বিদেশে থাকা স্বজনদের কেউই প্রায় আসতে পারেননি। এমনকি কোভিডের কারণে বড়দিনের উৎসবেও কিছু কাঁটছাট করা হয়েছে।
তবে উৎসব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে বো ব্যারাককে। বছর তিনেক আগে বো ব্যারাকে আসা ক্যারন বললেন, ‘‘আমাদের কথা তো কেউ ভাবতেনই না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসেছেন, এটাই তো আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা। উনি আশ্বাস দিয়েছেন পরের বছরের জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস বর্ষবরণ উৎসব করার ক্ষেত্রে আমাদের আরও উৎসাহ দিয়েছে। কোভিড-বিধি মেনে যতটা সম্ভব করা যায়, সেটাই হবে এ বছর।’’ একই কথা শোনালেন বো ব্যারাকের বাসিন্দা নিকোলাস, ব্র্যান্ডেন, অ্যালেনরা। বছর পঞ্চাশের ম্যানউইন বলছেন, ‘‘বো ব্যারাকে উৎসবের জন্য সরকার যদি আমাদের সাহায্য করে, তবে এর থেকে ভাল কিছু তো হতে পারে না।’’
এ বারেও বর্ষশেষের রাতে উৎসবের আয়োজন হয়েছে অ্যাংলোপাড়ায়। থাকছে নাচ-গানের আয়োজন, সঙ্গে এলাহি খাওয়াদাওয়া। তবে সবটাই কোভিড-বিধি মেনে। প্রতি বারের মতো বো ব্যারাক চত্বরে সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে এই অনুষ্ঠান প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত চলবে বলেই জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। তবে অনুষ্ঠান দেখতে বাইরে থেকে আসা লোকেদের জন্য ৫০০ টাকা করে টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন বো ব্যারাকের বাসিন্দাদের সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি অ্যাঞ্জেলা গোবিন্দরাজ। তিনি বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা খুশি, সবাই খুব উৎসাহ পেয়েছে। তাঁর এই আশ্বাস আগামী বছরের বড়দিনের পাশাপাশি, এ বারের বর্ষবরণের উৎসবকেও আরও রঙিন করবে।’’