যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মৈনাক পাল। ছবি: সংগৃহীত।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মৈনাক পাল প্রয়াত। উত্তরাখণ্ডের একটি হোটেলের ঘর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গলা এবং হাত কাটা ছিল তাঁর। মৈনাকের এই অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সহকর্মীরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা এই মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই বন্ধুর সঙ্গে উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়েছিলেন মৈনাক (৪৪)। ফেরার সময় অবশ্য তিনি একাই ছিলেন। লালকুয়াঁয় একটি হোটেলে উঠেছিলেন মৈনাক। শনিবার সেখান থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। কী ভাবে এই মৃত্যু, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
সূত্রের খবর, মৈনাকের পরিবারের তরফে শনিবার সন্ধ্যায় হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মৈনাক ফোন তুলছেন না। তার পরেই হোটেলের কর্মীরা ওই ঘরে গিয়ে দরজা ভাঙেন। দেখা যায়, শৌচালয়ে পড়ে আছে অধ্যাপকের দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর। তাঁর হাত এবং গলা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা। প্রাথমিক ভাবে একে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর দেহ কলকাতায় ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৈনাকের বাবা দেহ আনতে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডে। তাঁর হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে। রবিবারই কলকাতায় পৌঁছবেন তিনি। বাড়িতে মৈনাকের স্ত্রী এবং কন্যা রয়েছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুটার সাধারণ সম্পাদক এবং অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মৈনাক প্রেসিডেন্সি থেকে দর্শনে গ্র্যাজুয়েশন করেছিলেন। যাদবপুর থেকে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি করেন। তার পর সরকারি কলেজে চাকরি করেছেন কয়েক বছর। পরে প্রেসিডেন্সিতে যোগ দেন এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত সেখানে চাকরি করেন। ২০২২ সালে মৈনাক যাদবপুরে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। ওঁর স্ত্রী-ও ওঁর বিভাগেই পড়তেন। তিনি এখন বঙ্গবাসী সান্ধ্য কলেজে পড়ান। মৈনাক অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। মিতভাষী ছিলেন। শিক্ষক হিসাবে ছাত্রদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। ওঁর এই মৃত্যুতে আমরা হতবাক। মেধাবী এক জন মানুষ এবং ভাল গবেষককে আমরা হারালাম। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি। ওঁর পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।’’
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন, ‘‘আমি রেজিস্ট্রার হওয়ার পরপরই মৈনাক প্রেসিডেন্সিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার আগে সরকারি কলেজে পড়াতেন। অত্যন্ত ভাল শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রছাত্রীদের প্রিয় ছিলেন। ২০২২ সালে উনি যাদবপুরে চলে যান। শুধু দর্শন নয়, বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করতেন তিনি। মানুষ হিসাবেও অসাধারণ ছিলেন। অন্যান্য বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখে চলতেন। কারও সঙ্গে ওঁর কোনও রকম মনোমালিন্য হয়নি। হওয়া সম্ভব বলেও মনে হয় না। এমন এক জন গুণী মানুষের এই মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এটা বড় ক্ষতি। ভবিষ্যতে অনেক বড় কাজ করার সম্ভাবনা ছিল ওঁর।’’
যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের তরুণ সহকর্মীকে হারানোর বেদনা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। উনি এক জন অসাধারণ গবেষক এবং ভাল শিক্ষক ছিলেন। সকলের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করতেন। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’’
স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় স্তরেই প্রথম বিভাগে প্রথম মৈনাকের পছন্দের জায়গা ছিল পাহাড়। ছুটি পেলেই চলে যেতেন পাহাড়ে। সেই পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ডেই প্রয়াত হলেন তিনি।