আরজি করে জোগান দেওয়া রক্তমাখা গ্লাভস। —নিজস্ব চিত্র। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম (ইনসেটে)। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে এসেছে রক্তমাখা গ্লাভস! তা দিয়েই রোগী পরিষেবা দিতে হবে ডাক্তারদের। কী ভাবে তা সম্ভব? প্রশ্ন তুলেছেন আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারেরা। অভিযোগ, ওই গ্লাভস পরে রোগীদের চিকিৎসা করা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাবে। জুনিয়র ডাক্তারদের এই অভিযোগের তদন্ত চান স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওই রক্তমাখা গ্লাভসগুলি আলাদা করে সরিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, এর আগেও আরজি করে এই ধরনের অপরিষ্কার গ্লাভসের জোগান দেওয়া হত। সে সময়েও কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে লাভ হয়নি। মাঝে বেশ কিছু দিন নোংরা গ্লাভসের জোগান বন্ধ ছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার আবার সেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আরজি করের ইন্টার্ন দেবারুণ সরকার এক রোগীর চিকিৎসার সময় রক্তমাখা গ্লাভস দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে এক জন এইচআইভি রোগী এসেছিলেন। তাই তাঁর রক্ত নেওয়ার জন্য আমি গ্লাভস চেয়েছিলাম। প্যাকেট থেকে বার করা প্রথম গ্লাভসটাই ছিল নোংরা। ভেবেছিলাম, কেউ রাতে কাজ করে ভুলবশত নতুন গ্লাভসের সঙ্গে সেটি রেখে দিয়েছেন। সেই গ্লাভস ফেলে অন্য গ্লাভস নিলাম। তাতেও দেখলাম রক্তমাখা। ওই প্যাকেটের প্রায় সব গ্লাভসেই একই সমস্যা রয়েছে। নার্সকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানালেন, বৃহস্পতিবার সকালেই সেই প্যাকেট খোলা হয়েছে। অর্থাৎ, রক্তমাখা গ্লাভসই হাসপাতালে এসেছে।’’
গ্লাভসের প্যাকেটটি আপাতত আলাদা সরিয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সুপারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, এই ধরনের নানা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়েই তাঁরা আন্দোলন করছেন। এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘‘রক্তমাখা গ্লাভস ব্যবহার করে রোগীর চিকিৎসা করতে হলে এইচআইভি, হেপাটাইটিসের মতো রক্তবাহী রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। রোগ যদি না-ও ছড়ায়, কোনও সাধারণ রোগী চাইবেন না, এই গ্লাভস দিয়ে তাঁর চিকিৎসা করা হোক।’’
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। এই গ্লাভসগুলি আলাদা করে সরিয়ে রাখতেও বলা হয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বিচার এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে একাধিক বদলের দাবি জানিয়ে গত দু’মাস ধরে আন্দোলন করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পাঁচ দিন ধরে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেছেন সাত ডাক্তার। তাঁদের যে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে, তার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণ। যে বিষয়ে সরকারের কোনও সাড়া এখনও মেলেনি।