সপ্তমীতেও ‘অভয়া পরিক্রমা’য় বাধা দিল পুলিশ, তবে গার্ডরেল সরিয়েই এগিয়ে চলেছেন আন্দোলনকারীরা
বৃহস্পতিবার জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের ষষ্ঠ দিন। গত শনিবার রাত থেকে তাঁরা আমরণ অনশনে বসেছেন। ধর্মতলায় তাঁদের পাশে রয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারেরাও। তাঁরা প্রতীকী অনশন করছেন।
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় অনশনমঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারেরা। — নিজস্ব চিত্র।
মূল ঘটনা
‘অভয়া পরিক্রমা’য় আবার বাধা
ষষ্ঠীর পর ফের সপ্তমীতেও জুনিয়র ডাক্তারদের ‘অভয়া পরিক্রমা’য় বাধা দিল পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকানোর চেষ্টা করেছিল। যদিও আন্দোলনকারীদের আটকানো যায়নি। তাঁরা গার্ডরেল সরিয়েই এগিয়ে যান সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দিকে।
অনিকেতকে নিয়ে কী বলছেন ডাক্তার
আরজি করের ডাক্তার সৈকত নিয়োগী বলেন, ‘‘অনিকেতের অবস্থা অন্যান্যদের থেকে বেশি আশঙ্কাজনক। ওর ইউরিনে কিটোন বডি পাওয়া গিয়েছে। রিপোর্টটা আমরা দেখলাম, তাতে কিছুটা অ্য়াসিডোসিস ডেভেলপ করা শুরু করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওরা এই মুহূর্তে দুর্বলতা ছাড়া আর কিছু অনুভব করছে না। কিন্তু রিপোর্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে, আস্তে আস্তে ওদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে। সেটা হঠাৎ করে হতে পারে। ১০-১৫ মিনিট সময় হয়তো আমরা পাব। আইসিইউ ছাড়া সেই চিকিৎসা করা মুশকিল। আমরা পরামর্শ দিয়েছি, অনিকেতকে আইসিইউতে নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখতে। অনিকেতের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’
কী বলছেন অনশনকারীরা
পুলিশের চিঠি প্রসঙ্গে অনশনকারীরা বলেন, ‘‘আমাদের হাতে পুলিশ একটি চিঠি ধরিয়ে দিয়ে গেল। তাতে বলা হয়েছে, আমরা অনুমতি ছাড়া মঞ্চে বসে আছি। আমাদের উঠে যেতে হবে। জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে। এটা আমরা ভাল ভাবে দেখছি না। ওদের কোনও উদ্বেগ নেই।’’
কী আছে পুলিশের চিঠিতে?
হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে চিঠি দিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের বলা হয়েছে, ‘‘আপনারা গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় অনশন করছেন। জোর করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মঞ্চ বানিয়েছেন। আপনাদের সামনে যে বোর্ড রাখা হয়েছে, তা থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আপনাদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বুধবার আমরা আপনাদের অনুরোধ করেছিলাম, কলকাতা পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সের সাহায্য নিতে। কিন্তু আপনারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরকে অনুরোধ করেছি, আপনাদের জন্য এক দল চিকিৎসক মোতায়েন করা হোক। আমাদের অনুরোধ, আপনারা এই জায়গা ছাড়ুন এবং চিকিৎসার সাহায্য গ্রহণ করুন। সমস্ত প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’’
অনশনমঞ্চে পুলিশ
বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মতলার অনশনমঞ্চে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশ। হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি অনশনকারী সাত জুনিয়র ডাক্তারকে চিঠি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তাঁদের শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ। চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই ধর্মতলা ছেড়ে তাঁদের হাসপাতালে যেতে বলা হয়েছে।
অনিকেতের অবস্থা আশঙ্কাজনক
আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতোর শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক, ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে এমনটাই জানালেন সেই হাসপাতালের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী। তিনি জানিয়েছেন, অনিকেতকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন। তাঁকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
অনশনমঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারেরা
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চে আন্দোলনকারী দেবাশিস হালদার। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।
অনশনের ১১৩ ঘণ্টা
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন শুরু হয়েছে। ১১৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও অনশন চলছে। অনড় জুনিয়র ডাক্তারেরা।
অনশন তুলতে অনুরোধ সিনিয়রদের
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তোলার জন্য অনুরোধ করছেন সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা ধর্মতলায় পৌঁছেছেন। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের সন্তানসম। পশ্চিমবঙ্গের সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ যে অনুরোধ করছেন, আমরাও সেই অনুরোধ নিয়ে এসেছি। ওঁদের দাবি যথার্থ। সেগুলি ছিনিয়ে আনতে হবে। কিন্তু জীবন বাজি রেখে নয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের আর্জি, ওঁদের দাবিগুলির প্রতি আরও উদার, মানবিক হোন।’’
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চ। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।
অনশনমঞ্চে সাধারণ মানুষও
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চে সাধারণ মানুষও জমায়েত করেছেন। পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনমঞ্চে জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র।
১১১ ঘণ্টা পার
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের ১১১ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। সরকারের সঙ্গে বৈঠক থেকে সমাধানসূত্র মেলেনি। অনশন দীর্ঘতর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
শনিবার থেকে ধর্মতলার মঞ্চে অনশনে বসে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —ফাইল চিত্র।
‘সব আলোচনাই ইতিবাচক’
বৈঠক শেষে অন্য কথা বলেন মুখ্যসচিব পন্থ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, আজকের আলোচনাকে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক আলোচনা হিসাবেই নেবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সব আলোচনাই ইতিবাচক হয়। আজকের আলোচনাকে সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হলে ভালই হবে। ওঁরা অনশন থেকে উঠুন। দরকারে আবার আলোচনায় বসব।’’
‘নিষ্ফলা বৈঠক’
মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করে বেরিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। তাঁদের মতে, এই বৈঠক ‘নিষ্ফলা’। কোনও দাবি নিয়েই কোনও সদুত্তর মেলেনি সরকারের তরফে। কেউ কেউ বৈঠক থেকে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক
বুধবার রাতে জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনায় ডেকেছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল তাঁদের। গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক হয়।
সিনিয়রদের ‘গণইস্তফা’
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে একাধিক হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তারেরা ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন। আরজি কর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও সিনিয়র ডাক্তারেরা ইতিমধ্যে ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। একই পথে হাঁটবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারেরাও।
পাশে সিনিয়রেরাও
জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন এবং তাঁদের দাবিগুলিকে সমর্থন করে পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র ডাক্তারেরাও। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনশনমঞ্চে সিনিয়র ডাক্তারেরা প্রতীকী অনশনে বসেছেন। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা না খেয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা।
অনশনে কারা
ধর্মতলায় শনিবার রাতে অনশন শুরু করেছিলেন ছ’জন জুনিয়র ডাক্তার। পরে তাতে যোগ দেন আরজি করের অনিকেত মাহাতোও।