প্রতিরোধে দেখা নেই, দিনের শেষে আর্তনাদ

মহানগর দখলে মাঠে নেমে লড়াই তো দূর অস্ত্, শাসক দলের বিরুদ্ধে সামান্য লড়াইটুকু দিতেও ঘাম ছুটে গেল বিজেপির। ফলে লোকসভা নির্বাচনে ভোটের পরিমাণ এক লাফে অনেকটা বাড়ায় যে আশার আলো দেখেছিলেন তাঁরা, তা শেষ পর্যন্ত ডুবে গেল অন্ধকারে। এবং একই ভাবে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে আত্মসমর্পণ করল আর এক বিরোধী কংগ্রেসও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

বুথে আটকে রাখার অভিযোগে সরব বিজেপি প্রার্থী মীনাদেবী পুরোহিত। —নিজস্ব চিত্র।

মহানগর দখলে মাঠে নেমে লড়াই তো দূর অস্ত্, শাসক দলের বিরুদ্ধে সামান্য লড়াইটুকু দিতেও ঘাম ছুটে গেল বিজেপির। ফলে লোকসভা নির্বাচনে ভোটের পরিমাণ এক লাফে অনেকটা বাড়ায় যে আশার আলো দেখেছিলেন তাঁরা, তা শেষ পর্যন্ত ডুবে গেল অন্ধকারে। এবং একই ভাবে মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে আত্মসমর্পণ করল আর এক বিরোধী কংগ্রেসও।

Advertisement

এ রাজ্যে বিজেপির সংগঠন যে কতটা নড়বড়ে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল প্রার্থী বাছাইয়ের সময় রাজ্যের সদর দফতরে মারপিটের ঘটনায়। এ দিনও বোঝা গিয়েছে, শাসক দলকে মোকাবিলার মতো কৌশল কিছুই নেই বিজেপি নেতৃত্বের ভাঁড়ারে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বা লকেট চট্টোপাধ্যায় তবু সন্ত্রাসের অভিযোগ পেয়ে সেই সব এলাকায় গিয়ে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বিজেপি কর্মীদের কেউ কেউ বলেছেন, তৃণমূল যে ভাবে আটঘাট বেঁধে সন্ত্রাস করতে নেমেছিল, তাতে এটুকু মোটেও যথেষ্ট নয়।

কেমন ভাবে ‘সন্ত্রাসের আবহ’ তৈরি করেছিল শাসক দল? অনেকেরই বক্তব্য, শুধু ভোটের দিন বুথ দখল, ছাপ্পা, ভোটার বা বিরোধী কর্মীদের উপরে চড়াও হওয়ায়ই নয়, সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করতে পূর্বসুরি সিপিএমের দেখানো কোনও পথই প্রায় বাদ দেয়নি তৃণমূল। বিজেপির যেমন অভিযোগ, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি থান কাপড় পাঠিয়ে ভয় দেখিয়েছে। ওই ওয়ার্ডে প্রার্থীর এজেন্টকে মারধরও করা হয়েছে। বাম আমলে ঠিক এ ভাবেই ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হতো। এ যেন সেই মুদ্রারই অন্য পিঠ, বলছেন বিজেপি কর্মীরা।

Advertisement

আরও কয়েকটি উদাহরণ এগিয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতারাই। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁদের প্রার্থী এবং বর্তমান কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতকে একটি বিদ্যালয়ের বুথে বেশ কিছু ক্ষণ আটকে রাখা হয়। ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী শান্তনু সিংহকে নিশানা করে গুলি করা হয়। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মঞ্জু জায়সবালের এজেন্ট বিকাশ জায়সবালকে বুথ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ভবনের কাছাকাছি ছ’টি বুথে বিজেপি কর্মীদের ঘিরে ধরে মারা হয়। এবং সব ক্ষেত্রেই বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগের আঙুল শাসক দলের বিরুদ্ধে।

সারা শহরে যেখানে যেটুকু পেরেছেন, প্রতিরোধ করেছেন কর্মীরাই। রাহুলবাবু নিজে সে কথা মেনেও নিয়েছেন, ‘‘১৬, ২৭, ৪৬, ১০৮, ১০৯— এতগুলো ওয়ার্ডে আমাদের কর্মীরা প্রতিরোধ করলেন।’’ কিন্তু দিনের শেষে ঝুরি ঝুরি অভিযোগ নিয়ে বিবৃতি দিলেও দিনভর কোথায় ছিলেন নেতৃত্ব, সেই প্রশ্ন উঠেছে দলীয় কর্মীদের মধ্যেই। প্রতিরোধে তাঁরা আদৌ সক্ষম কি না, তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ। যদিও রাহুলবাবুর বক্তব্য, ‘‘অস্ত্রের জবাবে অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করব না। যা করা হয়েছে, ওটাই আমাদের প্রতিরোধ।’’

অথচ এক বছর আগে লোকসভা নির্বাচনের সময় ছবিটা ছিল অন্যরকম। এক লাফে ভোটের হার অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় ছোট লাল বাড়ি জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রামলাল কলকাতায় এসে বলেছিলেন, শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭২টির বেশি জয়ের লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা নামবেন। অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ কলকাতা পুরভোটে প্রচারও করেছিলেন বেশ জমকালো। এ দিন অবশ্য রাজ্য নেতাদের অধিকাংশই অদৃশ্য ছিলেন। খোঁজ মেলেনি নতুন সদস্য হওয়া কর্মী-সমর্থকদের।

বিজেপি-র মতো কংগ্রেসও সাংগঠনিক দুর্বলতার ফলেই এ দিন অধিকাংশ জায়গায় উপযুক্ত প্রতিরোধ করতে পারেনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী তা স্বীকার করে বলেন, ‘‘বেশির ভাগ জায়গাতেই কংগ্রেস কর্মীদের বুথে বসতে দেওয়া হয়নি।’’ তবে কংগ্রেসের দাবি, এর মধ্যেও ৫৫ এবং ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি বুথে প্রার্থীরা পুলিশ এবং তৃণমূলের হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করে প্রতিরোধ করেছেন। ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ নাদিমের অভিযোগ, বুথে যাওয়ায় তাঁকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। মুখে অ্যাসিড ছোড়ার হুমকিতেও দমেননি ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী ফতেমা আঞ্জুম। বিধানভবন থেকে এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দলীয় কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ জানানো হয়েছে। আক্রান্ত প্রার্থীরাও পুলিশ এবং কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু কর্মীদের উপর হামলার খবর শুনে দলের কোনও শীর্ষস্থানীয় নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিরোধ করেছেন বলে কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement