পুরভোটের আগমনী

কড়া নাড়ছে বিজেপি, উদ্বিগ্ন তৃণমূল

কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ২৬টিতে। ৩০টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে তারা। যার মধ্যে ৪টি ওয়ার্ডে জয়ের ব্যবধান একশোরও কম। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একনজরে শহরে এই হল বিজেপি-র অবস্থান। লোকসভা ভোটের পরে হয়েছে চৌরঙ্গি বিধানসভার উপনির্বাচনও। সেখানেও ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৩টি ওয়ার্ডে। তবে কি বিজেপি এ বার পুর নির্বাচনের কালো ঘোড়া?

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১০
Share:

কলকাতার ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ২৬টিতে। ৩০টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে তারা। যার মধ্যে ৪টি ওয়ার্ডে জয়ের ব্যবধান একশোরও কম। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একনজরে শহরে এই হল বিজেপি-র অবস্থান।

Advertisement

লোকসভা ভোটের পরে হয়েছে চৌরঙ্গি বিধানসভার উপনির্বাচনও। সেখানেও ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৩টি ওয়ার্ডে। তবে কি বিজেপি এ বার পুর নির্বাচনের কালো ঘোড়া? প্রশ্ন পুরমহলেই। তাই পুরভোট যত এগিয়ে আসছে, বিজেপিকে নিয়ে ততই উদ্বেগ বাড়ছে তৃণমূলে। অনেকের ধারণা, বিজেপিকে রুখতেই সম্প্রতি দিল্লি সফরে ‘অচ্ছুত’ বামেদের সঙ্গেও সখ্যতা করতে আগ্রহী হন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কেউ কেউ বলছেন, পুরভোটে বিজেপিকে একঘরে করতে কংগ্রেস ও বামেদের সঙ্গ নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে নেত্রীর, যা ২০১৬ সালে বিধানসভা বৈতরণী পার হওয়ার মহড়াও হবে।

লোকসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে, বিশেষত কলকাতা পুরসভায় বিজেপি-কে নিয়ে নানা জল্পনা চলছে শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরেই। সম্প্রতি কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত নিয়ে সতর্ক করেছেন তৃণমূলনেত্রী। পুরভোটে সিপিএম সমর্থকেরা বিজেপির দিকে ঝুঁকবে বলে মমতা মনে করেন। যার অর্থ তাদের ভোট বিজেপির পক্ষে যাবে।

Advertisement

অর্থাৎ এ বার পুরভোটে লড়াই যে কঠিন হবে, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সাংসদ, মন্ত্রী, কাউন্সিলর ও বিধায়কদেরও। এমনকী বেহালায় বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও দলীয় কর্মীদের বলেছেন, “এ বার লড়াইটা কঠিন।”

কাউন্সিলরদের একাংশের মতে, লোকসভা ভোটের পরে বিজেপির শক্তি বেড়েছে। গত কয়েক মাসে সারদা থেকে শুরু করে খাগড়াগড়, যাদবপুর, পাড়ুই এবং আরাবুল-কাণ্ডে বিব্রত শাসক দল। সিপিএমের ভোট বিজেপির ঝুলিতে পড়তে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী যে আশঙ্কা করেছেন, তা দলকে আরও অস্বস্তিতে ফেলতে পারে বলে মনে করছেন একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর। তাঁদের আশঙ্কা, সিপিএম সমর্থকদের অর্ধেকেরও বেশি ভোট বিজেপি পেলে ৬০-৭০টি ওয়ার্ডে ধাক্কা খাবে তৃণমূল।

তৃণমূলের এক মেয়র পারিষদের বক্তব্য, “এ বার লড়াইটা কঠিন। আসন কমবে। বিশেষত যে সব ওয়ার্ডে দলের মহিলা কাউন্সিলর রয়েছেন সেখানে জোর দিতে হবে বেশি।” বিজেপি জোয়ার আরও বাড়লে তৃণমূল আসন্ন পুরভোটে ৭৫-৮০ এর বেশি আসন পাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ওই মেয়র পারিষদ। এর উপর ত্রিফলা, লেক মল, লরির ট্রিপ চুরি-সহ পুরসভার একাধিক বিষয়কে হাতিয়ার করে ইতিমধ্যেই ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি, কংগ্রেস। যা পুরভোটে তৃণমূলকে বেগ দিতে পারে বলে মনে করছেন দলের কেউ কেউ।

প্রকাশ্যে অবশ্য মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, তাঁদের কোনও আশঙ্কা নেই। কারণ, লোকসভা ভোটের হিসেবে পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬-টিতে বিজেপি এগিয়ে ছিল। বাকি শতাধিক ওয়ার্ডে তাঁদের দলের প্রাধ্যন্যই বজায় আছে।

২০১০-এর পুরভোটে মোট ১৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯৫টি দখল করে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল কংগ্রেস। সে বার বামেরা পেয়েছিল ৩৩টি, কংগ্রেস ১০ এবং বিজেপি ৩। পরে অবশ্য কংগ্রেসের ৫ জন তৃণমূলে যোগ দেন। চলতি বছর লোকসভা ভোটের ফলাফলে সবচেয়ে শোচনীয় হাল বামেদের। দখলে থাকা ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১১টিতে তারা এগিয়ে রয়েছেন। সকলেই সিপিএমের কাউন্সিলর। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআইয়ের হাতে থাকা ১০ টি ওয়ার্ডের সবক’টিতেই শোচনীয় অবস্থা বাম-শরিকদের। চৌরঙ্গী বিধানসভা উপনির্বাচনে তা আরও খারাপ হয়েছে।

চৌরঙ্গী বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল ভাবিয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলরদেরও। ওই কেন্দ্রে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ১১টি। গত পুরভোটে ১১টির মধ্যে ৮টিতে বিজয়ী হয়েছি তৃণমূল। সেগুলি হলো ৪৪, ৪৮ থেকে ৫৩ এবং ৬২। বাকি ৩টির মধ্যে ৪৫ কংগ্রেস, ৪৬ সিপিএম এবং ৪৭ ওয়ার্ডে আরজেডি প্রার্থী জয়ী হয়। গত ৪ বছর ধরে পুরবোর্ডের ক্ষমতায় তৃণমূল, রাজ্য সরকারও তাদের হাতেই। শাসক হওয়া সত্ত্বেও চৌরঙ্গী উপনির্বাচনে ওই ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ৬টি, বাকি ৫টিতে এগিয়ে বিরোধীরা। এর মধ্যে বিজেপি ৩টি এবং কংগ্রেস ২টি ওয়ার্ডে এগিয়ে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ওয়ার্ডে সিপিএমের ভোট কমেছে, সেই ওয়ার্ডে বিজেপির পাল্লা তত ভারি হয়েছে। বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে সেই ওয়ার্ডে, যেখানে কংগ্রেস বেশি ভোট পেয়েছে। আর কংগ্রেস পিছিয়ে যাওয়া মানেই যে বিজেপি-র অগ্রগতি, তা জেনেবুঝেই চিন্তিত তৃণমূলনেত্রী থেকে শুরু করে দলের মন্ত্রী-কাউন্সিলরেরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement