প্রতীকী ছবি।
প্রতিষেধক বণ্টনে বৈষম্যের অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিষেধকের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “বলতে পারেন, বাংলা কেন মাত্র ১.৯৯ কোটি ডোজ় (প্রতিষেধক) পাবে? ...ওরা বাংলার বদনাম করে আর ভ্যাকসিন দেয় না।’’ এ বার তৃণমূল নেত্রীর সুরেই প্রতিষেধক বণ্টনে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে বলে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপির ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা।
তাঁদের অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষ রাজনীতির রং দেখে প্রতিষেধক দিচ্ছেন। যে ওয়ার্ডগুলিতে বিজেপির কোঅর্ডিনেটরেরা রয়েছেন, সেখানে ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রতিষেধক কম দেওয়া হচ্ছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যে হারে প্রতিষেধক রাজ্যে আসছে, তার ভিত্তিতেই ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বণ্টন করা হচ্ছে। বিজেপির ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা ইচ্ছাকৃত ভাবে এই বিষয়টির রাজনীতিকরণ করতে চাইছেন।
যদিও তাতে দমছেন না বিজেপির ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা। পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কোঅর্ডিনেটর মীনাদেবী পুরোহিত জানাচ্ছেন, তাঁর ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকেরা অনেকেই প্রতিষেধক পাচ্ছেন না। মীনাদেবীর কথায়, ‘‘অথচ আমার আশপাশে তৃণমূলের ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা যেখানে রয়েছেন, সেখানে প্রতিষেধক পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে। বিষয়টি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিয়েছি। তবে এখনও জবাব পাইনি।’’
বিজেপি নেতা তথা পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর বিজয় ওঝার আবার অভিযোগ, তাঁর ওয়ার্ডে প্রতিষেধক শিবিরের আয়োজন করছে পুরসভা, অথচ তাঁকেই জানানো হচ্ছে না! তাঁর কথায়, ‘‘বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের ব্রাত্য রেখে শিবির চলছে। সেখানে কাদের প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে, কাদের দেওয়া হচ্ছে না, পুরোটাই নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলের পরিচয়ের উপরে।’’ ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর সুব্রত ঘোষও বলছেন, ‘‘কাদের প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তা আগে থেকে ঠিক থাকছে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষেধক পাচ্ছেন।’’
যদিও পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষ জানাচ্ছেন, বিজেপির ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন। কেন্দ্রের কাছ থেকে যত প্রতিষেধক পাওয়া যাচ্ছে, তার ভিত্তিতে সব ওয়ার্ডে সেগুলি দেওয়া হচ্ছে। অতীনবাবুর কথায়, ‘‘সংক্রমণের সময়ে বিজেপির ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা কোথায় ছিলেন? রাস্তায় নেমে আমরাই তো পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। সেখানে আজকে এ সব ভিত্তিহীন দাবি করে পুরো বিষয়টা নিয়ে ওঁরা রাজনীতি শুরু করেছেন! ওঁদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই।’’
তৃণমূলের ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরদের একাংশের বক্তব্য, যে সব এলাকায় প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, সেই ওয়ার্ডগুলিতে হয়তো বেশি প্রতিষেধক যাচ্ছে। পুরসভার এক নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর তরুণ সাহা জানাচ্ছেন, প্রতিষেধক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ওয়ার্ডের পারফর্ম্যান্স
কেমন, সেই অনুযায়ী প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। যেখানে প্রতিষেধকের ভাল চাহিদা আছে, সেখানে প্রতিষেধক সরবরাহ ভাল হচ্ছে। আর যে সব ওয়ার্ডে এখনও তেমন সাড়া মেলেনি, সেখানে প্রতিষেধক কম সরবরাহ হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘মোদ্দা বিষয়, চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিষেধক বণ্টন করা হচ্ছে। এখানে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই।’’
তৃণমূলের আর এক বরো কোঅর্ডিনেটরের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরেরা যে প্রতিষেধক বণ্টনে রাজনীতির অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা কি নিজেদের ওয়ার্ডের অবস্থা নিয়ে ওয়াকিবহাল? ওয়ার্ডে বিজেপির কোনও সংগঠন রয়েছে নাকি যে, তাঁরা মানুষের চাহিদা বুঝতে পারবেন? শুরু থেকে সেই দায়িত্ব কিন্তু আমরাই নিয়েছি।’’