পাখির ডাক শোনা এবং তা রেকর্ড করার রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরেই। প্রতীকী ছবি।
ভোরের পাখির ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য নেই পক্ষীপ্রেমীদের। তাই আঁধার থাকতেই বনে-জঙ্গলে, অভয়ারণ্যে গিয়ে কান পাতেন তাঁরা। পাখিদের কিচিরমিচিরের মধ্যে থেকে চিনে নেন কোনও বিশেষপাখিকে। সেই জায়গায় পাখিদের জীবনযাপনের কী কী বিশেষত্ব, তা-ও টের পান তাঁরা। পাখিদের সেই প্রভাতী আসরকেই এ বার রাজ্য জুড়ে রেকর্ড করে রাখতে উদ্যোগী হলেন পক্ষীপ্রেমীরা।
আজ, ২ এপ্রিল ভোরে রবীন্দ্র সরোবর ও চিন্তামণি কর পাখিরালয়-সহ রাজ্যের প্রায় ২৫টি জায়গায় গিয়ে পাখিদের গান রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায়শোনালেন তাঁরা, যা ঘরে বসে উপভোগ করলেন সাধারণ শ্রোতারাও।প্রকৃতির পরিবর্তনকে বুঝতে পরবর্তী কালে এই রেকর্ডগুলি সংরক্ষণ করে রাখা হবে বলেই জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
পাখির ডাক শোনা এবং তা রেকর্ড করার রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরেই। তবে, রাজ্যজুড়ে একসঙ্গে ভোরের কলতানরেকর্ড করে সম্প্রচারের এমন উদ্যোগ এ দেশে এটাই প্রথম বলে দাবি ‘বার্ড ওয়াচিং সোসাইটি’ নামে একটি পাখিপ্রেমী সংস্থার অন্যতম সদস্য ও আয়োজক, চিকিৎসক কনাদ বৈদ্যের। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের প্রায় ১৩৫০টি প্রজাতির পাখির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৯৫০টিরও বেশি (অর্থাৎ, প্রায় ৭০ শতাংশ) প্রজাতির খোঁজ মিলেছে। তাই গোটা রাজ্যের পাখিদের কলতানকে একসঙ্গে রেকর্ড করে শোনাতে চেয়েছি। প্রতি বছর এটা করা গেলে পাখিদের বাসস্থানের পরিবর্তনও বোঝা সম্ভব। ‘ডন কোরাস’ দিবস পালন করতেই প্রথম বার এই উদ্যোগ।’’
পাখিপ্রেমীরা জানালেন, ভোর ৫টা থেকে রেকর্ডার অথবা মোবাইলে পাখিদের গান রেকর্ড করেছেন ৫০ জনেরও বেশি উৎসাহী। খাস কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর, জোকা, গড়িয়া, নিউ টাউনেরথাকদাঁড়ি তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চিন্তামণি কর পাখিরালয়, হাবড়া, হুগলির শ্রীরামপুর, ডানকুনি, বারুইপুর, ফ্রেজ়ারগঞ্জ, মন্দারমণি, অযোধ্যা পাহাড়া, দার্জিলিঙের লাভা, মাজুয়া বস্তি, মহানন্দা অভয়ারণ্য, আসানসোল, মুর্শিদাবাদের কান্দি প্রভৃতি এলাকাতেও কোথাও একা, কোথাও বা দল বেঁধে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁরা। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে হাজারো পাখির কলতান রেকর্ড করে সেগুলি একসঙ্গে জুড়ে নিয়ে, তা বাজানো হয়েছে নেটমাধ্যমে।
মে মাসের প্রথম রবিবার সারা বিশ্বে পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক ডন কোরাস’ দিবস। আয়ারল্যান্ডের রেডিয়োর উদ্যোগে ২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে পাখির কলতান রেকর্ড করে রেডিয়োয় সম্প্রচার করা শুরু হয়, যাতে অংশ নেয় ৭০টিরও বেশি দেশের রেডিয়ো স্টেশন। ওই সমস্ত দেশে সূর্যোদয়ের সময়ে কলতান রেকর্ড করে তা পর পর বাজানো হয় রেডিয়োর সেই অনুষ্ঠানে। ২০১৭ সালে সেই উদ্যোগে শামিল হয় ভারতের অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো-ও। পাখির গান রেকর্ড করা হয় চাপরামারির জঙ্গল থেকে।
তবে, কনাদ বলছেন, ‘‘সাধারণত বসন্তে প্রজননের সময়ে পাখিরাবেশি গান গায়। কিন্তু, এ দেশে মে মাসে একে গরম, তায় ঝড়বৃষ্টি লেগে থাকে। ফলে, পাখির ডাকরেকর্ড করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমরা একটু আগেই কাজটাকরতে চেয়েছি। আর মানুষের কাছে পাখিদের গানের আসরকে পৌঁছে দিতে ভরসা রেখেছি সোশ্যাল মিডিয়ায়।’’
২০১৮ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে চাপরামারিতে রেকর্ড করেছিলেন পাখিপ্রেমী এবং এই সংস্থার অন্যতম বর্ষীয়ান সদস্য সুদীপ্ত রায়। আজ তিনি হাজির ছিলেন চিন্তামণিকর পাখিরালয়ে। সুদীপ্ত বলছেন, ‘‘এ বার থেকে প্রতি বছর এই জায়গাগুলিতে কলতান রেকর্ড করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামীকয়েক বছর ধরে এটা করতে পারলেই সেই জায়গায় পাখির আওয়াজ কমেছে না বেড়েছে, বা কোনও পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা বুঝতে পারব। তাতে সেই জায়গায় পাখিরা কেমন আছে, সেটাও বোঝা যাবে।’’