প্রতীকী ছবি।
না আছে রেজিস্ট্রেশন, না আছে প্রয়োজনীয় নম্বর প্লেট। চালকের নাম-পরিচয় জেনে রাখার ব্যবস্থা তো নেই-ই। নেই যাত্রী-সুরক্ষার কোনও বন্দোবস্তও! শহর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো এমনই বাইক-ট্যাক্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে একের পর এক। করোনা-কালে ছোঁয়াচ এড়িয়ে কম খরচে গন্তব্যে পৌঁছনোর তাগিদে বাইক-ট্যাক্সির ব্যবহার বেড়েছে। সেই সঙ্গে অবশ্য বেড়েছে অভিযোগের সংখ্যাও। পরিবহণ দফতর বা পুলিশ অবশ্য এই বেপরোয়া বাইকের দৌরাত্ম্যে লাগাম পরাতে পারেনি গত কয়েক বছরেও। সাম্প্রতিক দু’টি ঘটনায় রাতের শহরে বাইক-ট্যাক্সিতে মহিলারা কতটা সুরক্ষিত, সেই প্রশ্নও উঠেছে। একটি ঘটনায় অভিযোগ, চালক তরুণী যাত্রীর যৌন নিগ্রহ করেছেন। অন্য ঘটনায় চালক তরুণী যাত্রীকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারিতেই লকডাউনের আগে বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে বাইক-ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য নিয়ে আলাদা ভাবে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল লালবাজারে। যাদবপুর ট্র্যাফিক গার্ডের পাশাপাশি হেডকোয়ার্টার্স ট্র্যাফিক গার্ডও এ ধরনের বেআইনি যাত্রা আটকে বেশ কয়েকটি বাইকের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনের ৩৯/১৯২ ধারায় পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছিল। এই ধরনের বাইকের বাণিজ্যিক কাজে (কনজ়িউমার ভেহিক্ল) ব্যবহারের কোনও রেজিস্ট্রেশন যেমন নেই, তেমনই বহু চালক আবার বেনামে অ্যাকাউন্ট খুলে অ্যাপ-নির্ভর এই বাইক-ট্যাক্সিগুলি চালাচ্ছেন বলেও সেই সময়ে জানিয়েছিল বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ড। বহু চালক নিজের লাইসেন্সও দেখাতে পারেন না বলে দাবি ট্র্যাফিক আধিকারিকদের। কিন্তু ওই পর্যন্তই। লালবাজারের তরফে সেই সময়ে এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে জানানো হলেও কিছুই হয়নি। লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, “করোনার জেরে লকডাউনের কারণেই বিষয়টি পিছিয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা পরিবহণ দফতরেরও অজানা নয়।”
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবহণমন্ত্রীর পদ থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী নিজে দায়িত্ব নিয়ে বাইক-ট্যাক্সি বিধিবদ্ধ করার কাজে জোর দিয়েছিলেন। বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে তুলে ধরতে বাইক-ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন খরচও কমিয়ে আনা হয়েছিল। সাড়ে ১১ হাজার টাকার পরিবর্তে পাঁচ বছরের জন্য বাইক-ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশনের খরচ ২১০০ টাকায় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর সঙ্গে বার্ষিক ৭৮০ টাকা ফি দিলেই সবটা হয়ে যাবে বলে ঠিক হয়। এক থেকে পাঁচটি এলাকার জন্য পারমিটের খরচ রাখা হয় ১১০০ টাকা। তবে সেই সঙ্গে অ্যাপ-ক্যাবের মতোই কয়েকটি বিধি-নিষেধ ঠিক করে দেওয়া হয় বাইক-ট্যাক্সির জন্য। তাতে বলা হয়, বাইক-ট্যাক্সিতে আলাদা হলুদ নম্বর প্লেট লাগাতে হবে। প্রতিটি বাইকে যাত্রীদের জন্য অবশ্যই রাখতে হবে প্যানিক বাটন। যাত্রী নিয়ে চলার সময়ে কোনও বাইকের গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারের বেশি হতে পারবে না। যাত্রীর জন্য অতিরিক্ত হেলমেটের পাশাপাশি রাখতে হবে বর্ষাতিও। কিন্তু বহু বাইকেরই রেজিস্ট্রেশন যেমন হয়নি, তেমনই শুধু খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে বাইক-ট্যাক্সি সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ।
এ নিয়ে পরিবহণ দফতরের কেউ এই মুহূর্তে মুখ খুলতে চাননি। পুলিশের তরফেও শুধু জানানো হয়, আনলক-পর্বে গণপরিবহণ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। পরিবহণ দফতরে ফের চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে। বাইক-ট্যাক্সি সংস্থাগুলিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। ‘কলকাতা অ্যাপ-ক্যাব অপারেটর্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ইউনিয়ন’-এর সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ অবশ্য বললেন, “দায় এড়ানোর জায়গাই নেই। বাইক-ট্যাক্সি সংস্থাগুলিরই উচিত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা। বাইকগুলি বিনা রেজিস্ট্রেশনে চলায় সরকারেরও প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, “অনেকেই যাত্রীদের ফোনের কুইক ডায়ালে পরিবারের লোকের নম্বর রেখে দিতে বা পেপার-স্প্রে সঙ্গে রাখতে বলছেন। কিন্তু এটা কোনও সমাধান হতে পারে না। প্রশাসনের উচিত এই সমস্যার সমাধান করা।”