হেলমেটবিহীন বেপরোয়া গতি, দুর্ঘটনায় মৃত দুই

হেলমেট না পরার প্রবণতা যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, রবিবার সন্ধ্যায় আরও এক বার তার সাক্ষী রইল মহানগর। দিকে দিকে প্রচার যতই চলুক, তাতে সচেতনতা যে বাড়ছে না, সেটাই ফের দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

দুর্ঘটনার পরেও সেই পথেই চলছে ঝুঁকির যাতায়াত।নিজস্ব চিত্র

হেলমেট না পরার প্রবণতা যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, রবিবার সন্ধ্যায় আরও এক বার তার সাক্ষী রইল মহানগর। দিকে দিকে প্রচার যতই চলুক, তাতে সচেতনতা যে বাড়ছে না, সেটাই ফের দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল।

Advertisement

রবিবার রাতে গড়িয়ার কাছে কামালগাজিতে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরী ও তার বন্ধু যুবকের। হেলমেট ছিল না কারও মাথাতেই। পুলিশ জানায়, ওই দু’জনের নাম পায়েল গুহ (১৭) ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় (২১)। কিশোরী এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

পায়েলের পরিবার জানায়, সোমবার ছিল অঙ্ক পরীক্ষা। আগের দিন বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করা হলেও কথা শোনেনি সে। আটটা নাগাদ বেরোনোর সময়ে ঠাকুরমাকে বলে গিয়েছিল, রাত হওয়ার আগেই ফিরে আসবে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ কামালগাজি উড়ালপুলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। রিজেন্ট পার্ক তালবাগানের বাসিন্দা পায়েলের সঙ্গেই মারা যান তার বন্ধু, নেতাজিনগরের রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ জানায়, রাহুলই বাইক চালাচ্ছিলেন। পায়েল
পিছনে বসেছিল।

Advertisement

রবিবার সন্ধ্যায় পায়েলের সঙ্গে থাকা তার বান্ধবী, টালিগঞ্জের বাসিন্দা সুস্মিতা কুণ্ডু আনন্দবাজারকে জানায়, রাহুল, তাদের আর এক বন্ধু আমন, পায়েল ও সে কামালগাজিতে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে।

সুস্মিতা জানায়, ওই বন্ধুর বাড়িতে যাওয়ার সময়ে আমনের মোটরবাইকের পিছনের সিটে বসেছিল পায়েল। রাহুলের বাইকে ছিল সুস্মিতা। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময়ে আমনের বাইকের পিছনের সিটটি উঁচু বলে বসতে অসুবিধা হচ্ছিল পায়েলের। তাই রাহুলের বাইকের পিছনে সে বসে। কামালগাজির রাস্তায় আমনের থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে যান রাহুল।

সুস্মিতা জানায়, পায়েলদের দেখতে না পেয়ে তাকে ফোন করবে বলে ভাবে সে। কিন্তু তার ফোনে ব্যালান্স ছিল না। রাস্তায় বাইক দাঁড় করিয়ে এক পথচারীর মোবাইল থেকে পায়েলকে ফোন করলে এক ব্যক্তি সেই ফোন ধরে দুর্ঘটনার খবর দেন। সুস্মিতাকে স্থানীয় হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলেন ওই ব্যক্তি। আমন ও সুস্মিতা সেই হাসপাতালে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাহুল বা পায়েল— কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। বাইক তীব্র গতিতে উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাচ্ছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আচমকা সেটি রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। পায়েল প্রথমে রেলিংয়ের বাইরে থাকা বৈদ্যুতিন তারে ছিটকে গিয়ে পড়ে। সেখানে থেকে উল্টে পড়ে ই এম বাইপাসের উপরে। রাহুল ছিটকে পড়েন একটি গাড়ির উপরে। বুকে আঘাত পান তিনি। এর পরে দু’জনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

পায়েল গুহ। নিজস্ব চিত্র

সোমবার সকালে তালবাগানের বাড়িতে গিয়ে পায়েলের পরিবারের দেখা মেলেনি। ঘর ছিল তালাবন্ধ। পরে ফোনে পায়েলের ভাই সোনা গুহ বলেন, ‘‘অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন পায়েলকে বাড়ি থেকে বেরোতে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু, সে কারও কথা না শুনে বেরিয়ে যায়।’’

প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তিন মাস হল তালবাগানে বাড়ি ভাড়া নিয়েছে পায়েলের পরিবার। তার বাবা বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন। এক ভাই, মা ও ঠাকুরমার সঙ্গে থাকত পায়েল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, পায়েলের মা আয়ার কাজ করেন। তাঁদের এক প্রতিবেশী এ দিন বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় পায়েলকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেছিলেন ওর ঠাকুরমা। কিন্তু পায়েল কথা শোনেনি। একটা ছেলের সঙ্গে মোটরবাইকে উঠে বেরিয়ে যায়। সকালে শুনি পায়েল মারা গিয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, রাহুলের বাবাও কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর মা একটি সোনার দোকানে কাজ করেন।

সোমবার বিমানবন্দরের কাছে যশোর রোডে অটো ও গাড়ির ধাক্কায় জখম হয় অটোয় থাকা পাঁচ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়।

সোমবারই ব্যারাকপুরের লালকুঠি এলাকায় ফের বাইকের বেপরোয়া গতির শিকার হলেন দু’জন। পুলিশ জানায়, হেলমেটহীন তিন আরোহী বাইকে চেপে ব্যারাকপুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। লরির ধাক্কায় রাস্তায় ছিটকে পড়েন তাঁরা। ঘটনাস্থলেই গোপী হেলা (১৫) ও রাজু সাউ (২৮) নামে দুই আরোহীর মৃত্যু হয়। সুশীল কুমার নামে আর এক জন হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুূমান, মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্যই এই দুর্ঘটনা। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement