উচ্চ আদালতের তিরস্কারের মুখে পড়ে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে বিধাননগর পুরসভা। ফাইল চিত্র।
উচ্চ আদালতের তিরস্কারের মুখে পড়ে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করতে চলেছে বিধাননগর পুরসভা। বিধাননগরের বেআইনি সমস্ত বহুতল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খালি করিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রোমোটারদের নির্দেশ পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। না-হলে পুরসভাই তা ভেঙে দেবে। সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তের কথাই উচ্চ আদালতে জানাতে চলেছে পুরসভা। যদিও ওই সব বাড়ি খালি করাতে গিয়ে প্রোমোটার ও ক্রেতাদের মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুর আধিকারিকেরা। কারণ, বহু টাকা দিয়ে কেনা ফ্ল্যাট খালি করে চলে যেতে কোনও ক্রেতাই চাইবেন না। ফলে, এই সিদ্ধান্তে আদালতের সামনে পুরসভার সদর্থক ভাবমূর্তি তৈরি হলেও বেআইনি নির্মাণগুলির বিরুদ্ধে কত দূর ব্যবস্থা শেষ অবধি নেওয়া যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
উল্লেখ্য, একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে গত এপ্রিলেই বেআইনি বহুতলের বিরুদ্ধে বিধাননগর পুরসভা কী ভূমিকা নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছিল উচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে তিরস্কারের মুখে পড়তে হয় পুরসভাকে। বিধাননগর পুর এলাকায় ৩৫৫টি বেআইনি বহুতল তৈরি হয়েছে কিংবা হচ্ছে শুনে বিস্ময় প্রকাশ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।আদালত সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের তরফে আদালতে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছে, বেআইনি বাড়ির সংখ্যা ৩৫৫। তার মধ্যে চারতলা ১১৩টি, পাঁচতলা ৭৫টি, তেতলা ৬৬টি এবং চারটি ছ’তলা বহুতল রয়েছে।
পুর আধিকারিকদের একটি অংশ মনে করছেন, যে সব বহুতলে বসবাস শুরু হয়নি, সেগুলি ভাঙার সুযোগ থাকলেও, যেখানে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়ে গিয়েছে এবং লোকজন বসবাস করছেন, সেখানে ক্রেতারা প্রোমোটারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যেতে পারেন। কিংবা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে পুরসভার সিদ্ধান্তের উপরে স্থগিতাদেশ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। ফলে, সেগুলি সহজে ভেঙে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ওই সমস্ত বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে মিউটেশন বা সিসি, কিছুই থাকে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দেখেই ক্রেতারা ফ্ল্যাটগুলি কিনেছেন। তাই এ বার নতুন নিয়ম করে ব্যাঙ্কগুলিকে বলে দেওয়া হয়েছে, বিধাননগরের ক্ষেত্রে গৃহ ঋণ দিতে হলে ক্রেতার থেকে পুরসভার ছাড়পত্র দেখতে চাইতে হবে। এমনকি, সংযোগ দেওয়ার আগে ওই ছাড়পত্র দেখতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকেও। আদালতের নির্দেশ মেনে আমরা কী পদক্ষেপ করেছি, তা প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। হয় প্রোমোটার জায়গা খালি করে নির্মাণ ভাঙবেন, না-হলে পুরসভা ভেঙে দেবে।’’
এমনই পরিস্থিতির মাঝে বিধাননগর পুর এলাকার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিয়াড়ার তালবাগান অঞ্চলে একটি ছ’তলা বহুতল সম্প্রতি হেলে পড়েছে। যার জেরে ফের প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার নজরদারি ব্যবস্থা নিয়ে। পুর আধিকারিকদের দাবি, ওই বহুতলের নির্মাণকারীদের নোটিস পাঠানো হলেও প্রোমোটার কাগজপত্র নিয়ে পুরসভায় দেখা করেননি। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেই এ দিন এক পদস্থ আধিকারিক জানান। কিন্তু ওই বহুতল অনেক দিন ধরে তৈরি হওয়ার সময়েও কেন সেটি পরিদর্শন করা হল না, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। ওই হেলে পড়া বহুতলের প্রোমোটার ঝন্টু নাথ বুধবার দাবি করেছেন, তাঁর সব কাগজপত্র পরিষ্কার এবং সবই পুরসভায় জমা দেওয়া আছে।