শনিবারের সন্ধ্যায় কলকাতা ভাসল সুরের মুর্ছনায়। বিক্রম ঘোষ ও তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের যুগলবন্দিতে সুরের নেশায় বুঁদ হয়ে রইল শহরবাসী। গোটা শহর যখন বৃষ্টিস্নাত, সেই সময় টলিগঞ্জ ক্লাবে তবলা ও সরোদের ফিউশনে এক অনন্য অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা।
২১মে বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স ও ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল বাংলা উৎসবের। অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার ছিল, আনন্দবাজার অনলাইন এবং দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া মাই কলকাতা। সেই অনুষ্ঠানেই এই প্রথমবার একসঙ্গে ফিউশন অনুষ্ঠান করলেন বিক্রম ঘোষ ও তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। মঞ্চস্থ হল ‘রাগা ফিউশন’।
মঞ্চে প্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন পিডব্লিউসি-র অ্যাডভাইজরি লিডার ও বেঙ্গল চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্ণব বসু, টলিগঞ্জ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জয়দীপ দত্ত গুপ্ত এবং বেঙ্গল চেম্বারের ফিল্মস, মিউজিক এবং এন্টারটেইনমেন্ট কমিটির চেয়ারপার্সন তথা বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল।
এর পর একে একে মঞ্চে ডেকে নিলেন বিক্রম ঘোষ, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারকে। ড্রামে সঙ্গত দিলেন সত্যজিত মুখোপাধ্যায়, কিবোর্ডে পুলক সরকার। গোটা অনুষ্ঠানটিকে কণ্ঠের জাদুতে বেঁধে রাখলেন নির্মাল্য রায়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগেই বিক্রম ঘোষ বললেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কথা। তাঁদের এই জুটি প্রায় হাজারের কাছাকাছি অনুষ্ঠান করেছে। অথচ সেগুলির একটিও ফিউশন নয়। কলকাতা প্রথমবারের জন্য সাক্ষী রইল এমন ধরনের এক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠান শুরু হল কালবতী রাগে।
বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় এসি শামিয়ানায় যখন শাস্ত্রীয় সুরে মজে রয়েছে দর্শক, ঠিক সেই সময়েই বিক্রম ঘোষ ও তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার উপস্থাপন করলেন বর্ষার রাগ — ‘মিয়াঁ কি মলহার’। যে রাগে উঠে এল বৃষ্টির রাজকীয় স্বভাব। এর পরে একে একে মঞ্চস্থ হল রাজস্থানী লোক রাগ, রাগ কিরওয়ানি, আরও কত কি!
অনুষ্ঠানের মধ্যেই যেন হঠাৎ তাল বদলালেন বিক্রম ঘোষ। সত্যজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই তালে তালে গাল ও বুক বাজিয়ে মুহূর্তে বদলে দিলেন অনুষ্ঠানের ছন্দ। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তা শুনলেন দর্শক। তাল মেলালেন তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারও। হাততালিতে ফেটে পড়ল গোটা হল।
অনুষ্ঠান সমাপ্ত হল আরও এক সুরেলা রাগ, সিন্ধু ভৈরবী দিয়ে। বিক্রম ঘোষ জানালেন, এই রাগ এখনও পর্যন্ত তৈরি হওয়া সব থেকে সুন্দর একটি রাগ। যা সাধারণত ভোরের আকাশে আলো ফোটার সময়ে বাজানো হয়ে থাকে। অথচ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে এটি যেন সুন্দরভাবে মিশে গিয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষ এমন এক সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য দুই পণ্ডিতকে অভিনন্দন জানালেন অরিন্দম শীল। বললেন, “তেজেন্দ্র দা এবং বিক্রম আসলে সঙ্গীত জগতের সুপারম্যান। তাঁরা প্রমাণ করেছেন যে সঙ্গীত সবকিছুকে মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দিতে পারে।” সেই সঙ্গে জানালেন, ২০২৩-এ এই বাংলা উৎসব দুই দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।