Road Accident at Maa Flyover

শহরে ফের দুর্ঘটনা, পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রীইকি বাড়াচ্ছে বিপদ

ভার বহনকারী লরি বা ছোট গাড়ি যাওয়ার সময়ে বালি বা অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ফেলতে ফেলতে যাচ্ছে। এর জন্য রাস্তার পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াচ্ছে যে, তাতে গাড়ির চাকা পড়লেই পিছলে যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৮
Share:

দুর্ঘটনাপ্রবণ হয়ে উঠছে মা উড়ালপুল। — ফাইল চিত্র।

গাড়ির সামনের অংশ বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বনেট দুমড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে এসেছে। ভেঙে গিয়েছে ‘উইন্ডস্ক্রিন’। দুমড়ে গিয়েছে এক পাশের দরজা। সামনের দু’টি চাকাও ভেঙে গিয়েছে। বেরিয়ে এসেছে চাকার কভার!

Advertisement

শুক্রবার সকালে মা উড়ালপুলে দুর্ঘটনায় পড়া একটি গাড়ির অবস্থা হয়েছে এমনই। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সল্টলেকের দিক থেকে মা উড়ালপুলে ওঠা গাড়িটির গতি এতই বেশি ছিল যে, রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উল্টো দিকের লেনে চলে যায় সেটি। কোনও মতে নিয়ন্ত্রণ রাখে সেই দিক থেকে আসা গাড়িগুলি। ডিভাইডারের একটি বাতিস্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা শাহবাজ হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে তাঁকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল তপসিয়া থানার অন্তর্গত। পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়িটিতে শাহবাজ-সহ পাঁচ জন ছিলেন। অন্যেরা পালিয়ে গেলেও তিনি পারেননি। শামসুল হুদা রোডের বাসিন্দা, বছর আটাশের শাহবাজের পায়ে চোট লেগেছিল। একটি পার্টি থেকে ফিরছিলেন পাঁচ জন। মত্ত অবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়িটি চালানোর জেরেই এই দুর্ঘটনা বলে পুলিশের অনুমান।

চলতি মাসের গত ১৫ দিনে একের পর এক দুর্ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে পুলিশকে। মা উড়ালপুলেই গত এক সপ্তাহে এই নিয়ে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটল। লালবাজারের হিসাব, চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত যতগুলি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এই সময়ে হওয়া গত দু’বছরের দুর্ঘটনার সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। কী করে এমন দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে লালবাজার। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর পাশাপাশি উঠে আসছে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী আরও কয়েকটি বিষয়। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, এই সময়ে মধ্যরাতে এবং ভোরের দিকে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতার অভাবকে দায়ী করা হয় কিছু ক্ষেত্রে। এই বছর এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে পথের অবস্থা।

Advertisement

ওই ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় পড়ে থাকা বালি, স্টোনচিপস বা অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী দুর্ঘটনার পিছনে একটা ভূমিকা পালন করছে। মাত্রাতিরিক্ত ভার বহনকারী লরি বা ছোট গাড়ি যাওয়ার সময়ে বালি বা অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী ফেলতে ফেলতে যাচ্ছে। এর জন্য রাস্তার পরিস্থিতি এমনই দাঁড়াচ্ছে যে, তাতে গাড়ির চাকা পড়লেই পিছলে যাচ্ছে। মোটরবাইকের সওয়ারিরা বিপদে পড়ছেন সব চেয়ে বেশি।’’ এ নিয়ে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে শীর্ষ কর্তাদের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে মাত্রাতিরিক্ত ভার নিয়ে চলা গাড়ি আটকানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। রাতে নাকা-তল্লাশি বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদেরও পদক্ষেপ করতে বলা হচ্ছে।

তবে পুলিশেরই একটি অংশের বক্তব্য, আগেও এমন মাত্রাতিরিক্ত ভার বহনকারী লরি বা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। শীতের রাতে যেখানে দৃশ্যমানতা এমনিই কম থাকে, সেখানে রাস্তায় পড়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রী বাঁচিয়ে কী ভাবে গাড়ি চালানো যাবে, ভেবে পাচ্ছেন না চালকদের অনেকেই। খন্নার একটি মোটর ট্রেনিং স্কুলের কর্তা সুদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এমন রাস্তায় গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ বলে কিছু হয় না। বিষয়টি পুলিশেরই দেখা উচিত। অন্যথায় এমন দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে।’’ লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘মূলত ই এম বাইপাস এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের নানা জায়গায় এই ধরনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে। সেখানকার ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে সতর্ক করার পাশাপাশি থানাগুলিকে নাকা তল্লাশিতে জোর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’’ কিন্তু এতেও পরিস্থিতির বদল হবে কি? উত্তর মিলবে আগামী কয়েক দিনেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement