শুধু পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়াই নয়, বেশ কিছু পড়ুয়ার মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। প্রতীকী ছবি।
কেউ আগের চেয়ে কম কথা বলছে। কেউ কেউ ক্লাসের পুরো ৪০ মিনিট মনঃসংযোগ ধরে রাখতে পারছে না। কেউ আবার অল্পেই বিরক্ত হচ্ছে বা রেগে যাচ্ছে।
প্রায় দু’বছর পার করে স্কুল খোলার পরে বহু পড়ুয়াই যে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছে, প্রথম দিন থেকেই তা লক্ষ করছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, শুধু পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়াই নয়, বেশ কিছু পড়ুয়ার মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষকই জানাচ্ছেন, ৪০ মিনিটের ক্লাসে গোটা সময়ে মনঃসংযোগ ধরে রাখতে পারছে না পড়ুয়াদের অনেকেই। উত্তরপাড়ার একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক সৌগত বসু বললেন, ‘‘ভাল ছাত্রেরাও ক্লাসের শেষ দিকে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা মনে রাখতে পারছে না।’’ শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, আগে তাঁরা ক্লাসে ঢুকলে সবাই যে ভাবে উঠে দাঁড়াত, এখন আর তা করছে না। সৌগতবাবুর মতে, “শিক্ষকদের প্রতি অশ্রদ্ধা থেকে এমনটা করছে, তা কিন্তু নয়। ওদের অভ্যাসটা চলে গিয়েছে।”
মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানালেন, টিফিন পিরিয়ডে যে ভাবে পড়ুয়াদের হুটোপাটি করতে দেখা যেত, এখন আর তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। বহু দিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় গল্পগাছা করলেও খেলাধুলোর অভ্যাসটা কমে গিয়েছে। রাজা বলেন, “সব চেয়ে বেশি সমস্যা দেখছি মনঃসংযোগ নিয়ে।” তবে মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের মতে, “পড়ুয়াদের আচরণগত পরিবর্তন সাময়িক। টানা স্কুল করলে সব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
দু’বছর আগে ভর্তি হলেও এ বার অনেকেই প্রথম স্কুলে এল। আগে যারা প্রাক্-প্রাথমিকে ভর্তি হয়েছিল, তারা একেবারে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এসে ক্লাস শুরু করেছে। তাদের কাছে আবার স্কুল, ক্লাস শিক্ষক— সবই নতুন। ওই পড়ুয়াদের অধিকাংশই একটু গুটিয়ে থাকছে। রাজা বলেন, “পড়ুয়ারা যাতে আগের মতো স্বাভাবিক আচরণ করে, তার জন্য ওদের কাউন্সেলিং-ও করছি। ওরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।”
সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ সিংহ মহাপাত্র জানান, নতুন পড়ুয়াদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে ও একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্বাগত জানাতে তাঁরা একটি অনুষ্ঠান করেছেন। একাদশের পড়ুয়াদের জন্য মাঝে স্কুল খুললেও করোনা-আতঙ্কে তারা অনেকেই আসেনি। পাপিয়া বলেন, “দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া, যারা এ বার পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বেরিয়ে যাবে, তাদের ফেয়ারওয়েল দেওয়া হল। গত দু’বছরে ওই পড়ুয়ারা শিক্ষকদের দেখেনি। বন্ধুদেরও দেখেনি। কিন্তু আগামী দিনে পথ চলার সময়েও স্কুলের শিক্ষকেরা ও বন্ধুরা যে তাদের পাশে থাকবেন, তা বোঝানোর জন্যই ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।”