রত্না ও শোভন-বৈশাখী
অনেক টালবাহানার পর বিজেপি-র হয়ে রাজনীতির ময়দানে নেমে পড়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তখন থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, বিজেপি-র কলকাতা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক কবে নিজের কর্মভুমি বেহালায় পা রাখবেন? সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বেহালায় যাচ্ছেন ‘কানন’ (শোভনের ডাকনাম। যে নামে তাঁকে ডাকতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। তাঁর কর্মসূচিতে সঙ্গী হবেন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সোমবার দক্ষিণ কলকাতা বিজেপি সভাপতি শঙ্কর শিকদার জানিয়েছেন, মঙ্গলবার দুপুর তিনটেয় বেহালা ১৪ নম্বর বাস স্ট্যান্ড থেকে ঠাকুরপুকুর থ্রি-এ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রোড-শো করবেন শোভন-বৈশাখী। দীর্ঘদিন পর বেহালায় ফিরে শোভন বক্তৃতায় কী বলেন, সে দিকেই নজর এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের। ২০০০ সালে তৃণমূলে এলেও বেহালাকে মমতার দলের ‘দুর্গ’ তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন শোভন। এ বার সেই দুর্গ ভাঙার জন্যই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে চলেছেন তিনি। তাই প্রথম পদক্ষেপেই তাঁকে জমি ফাঁকা ছাড়তে নারাজ তৃণমূলও। তাই শোভনের কর্মসূচি শুরুর ঘণ্টা খানেক আগেই পাল্টা মিছিলের ডাক দিয়েছে শাসকদল। রবিবার বেহালা পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের বুথ কর্মশালায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২৯ পল্লির মোড় থেকে মঙ্গলবার বেলা ১২টায় একটি মিছিল হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ওই কর্মসূচিকে শোভন-বৈশাখীর ‘পাল্টা’ বলতে নারাজ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা বেহালার পরিচিত তৃণমূল নেতা অঞ্জন দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের কর্মসূচি ওঁরা করবেন। আমাদের কর্মসূচি আমরা। তাই পাল্টা কর্মসূচির কথা আসছে কেন? আর যদি পাল্টা কর্মসূচি করতেই হত, তা হলে তো ওই রাস্তা দিয়েই আমাদের মিছিল হত!’’
সাড়ে তিন বছর আগে পর্ণশ্রী এলাকার মহারানি ইন্দিরা দেবী রোডের বাড়ি ছাড়েন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। তখন থেকেই তাঁর ঠিকানা গোলপার্কের এক বহুতলের ফ্ল্যাট। এই সময়কালে একে একে মেয়র পদ থেকে শুরু করে মন্ত্রিত্বও ছেড়েছেন। ছেড়েছেন তৃণমূলও। কেবল ছাড়েননি বেহালা পূর্বের বিধায়ক পদ। বাড়ি ছাড়ার পর প্রথম দিকে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে এলেও বিজেপিতে যোগদানের পর তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝখানে শোভনের তৃণমূলে ফেরার জল্পনাও শুরু হয়েছিল। য়কন তিনি মমতার কাছে ভাইফোঁটা নিতে গিয়েছিলেন। আর বৈশাখী নবান্নে গিয়েছিলেন মমতার সঙ্গে দেখা করতে। তবে সে সবই এখন অতীত। এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি-র মিটিং-মিছিলে যুগলে দেখা যাচ্ছে শোভন বৈশাখীকে।
মঙ্গলবারের রোড-শো শোভনের বিধানসভা কেন্দ্র বেহালা পূর্বের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে। তাই ওই মিছিল নিয়ে বিজেপি কর্মীদের পাশাপাশি তৃণমূলের কর্মী মহলেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তবে স্বামী শোভনের বেহালার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে একেবারেই আগ্রহ দেখাননি রত্না চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি-র কর্মসূচিতে বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে শোভনের বেহালায় আগমন প্রসঙ্গে তিনি সোমবার বলেছেন, ‘‘বিজেপি-র হয়ে তিনি র্যালি করতে আসছেন শুনেছি। কিন্তু তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। ওই মহিলাকে (বৈশাখী) নিয়ে তিনি যখন বেহালায় আসবেন, তখন আমজনতা যা বোঝার বুঝে নেবে। ওই মহিলাকে নিয়ে তিনি যত বেশি হাঁটবেন, তৃণমূলের ভোট তত বাড়বে। সাড়ে তিন বছর আমাদের সঙ্গে থাকেন না। আমার সঙ্গে যে কথা বলবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চাদেরও খোঁজও তো নেন না। এর জবাব মানুষ দেবে!’’