স্তব্ধ: নাবালিকাকে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে পার্ক সার্কাসের কাছে রেললাইন অবরোধ স্থানীয়দের। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
কিছু দিন আগেই ট্যাংরায় নিখোঁজ থাকা এক যুবককে খুনের ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির অভিযোগেউত্তপ্ত হয়েছিল এলাকা। সেই ঘটনার ১০ দিনের মাথায় ফেরএকই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বার অভিযোগের তির তিলজলা থানার দিকে। রবিবার সকাল থেকে নিখোঁজ এক নাবালিকাকে খুঁজে পেতে তার পরিবার পুলিশে গেলেও প্রথমে পুলিশ তল্লাশির কাজে তেমন তৎপরতা দেখায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের। তবে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও নিখোঁজ ব্যক্তি বা কিশোরকে খুঁজে পেতে পুলিশি গাফিলতির একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। বার বার পুলিশের শীর্ষ কর্তারা নিখোঁজের মামলা গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বললেও তা আদতে করা হয় না বলেই অভিযোগ। তাই বাগুইআটি থেকে হরিদেবপুর, ভবানীপুর থেকে তিলজলা— কোনও ঘটনাতেই পুলিশ অপহৃতকে জীবিত অবস্থায় খুঁজে বার করতে পারেনি।
পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, গত বছর বাগুইআটিতে দুই কিশোরের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাতেও তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে কিছুই করেনি বলে অভিযোগ উঠেছিল। নিখোঁজ হওয়ার দিন পনেরো পরে জানা যায়, ওই দুই কিশোরের দেহ উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি থানার পুলিশ সেখান থেকে উদ্ধার করেছে। এর পরেই পুলিশকর্তাদেরপর্যবেক্ষণে উঠে আসে, বাগুইআটি থানার আধিকারিকদের তদন্তে গাফিলতির দিকটি। এর পরেই নবান্ন থেকে বার্তা দেওয়া হয়, নিখোঁজ বা অপহরণের মতো ঘটনা ঘটলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে নিচুতলার পুলিশকর্মীদের। তবে, এর পরেও পরিস্থিতির বদল হয়নি। কারণ, হরিদেবপুরে এক যুবককে খুনের ঘটনায় ফের তদন্তে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। অয়ন মণ্ডল নামে হরিদেবপুরেরওই যুবক নিখোঁজ হওয়ার পরেও স্থানীয় থানা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি বলে অভিযোগ। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। বছরকয়েক আগে জোড়াবাগানে একটি ন’বছরের শিশুকে অপহরণ করে, যৌন নিগ্রহ করার পরে খুন করেছিল অভিযুক্ত। সেই ঘটনাতেও পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। যার ফলে জনরোষ আছড়ে পড়েছিল শহরের পথে।
পুলিশকর্তারা অবশ্য বলছেন, নিখোঁজ বা অপহরণের মতো ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে বাহিনীকে। বিশেষত, কোনও নাবালক বা শিশুর নিখোঁজের মতো ঘটনা অতি সংবেদনশীল। ফলে এমন ঘটনা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া আছে। কিন্তু তার পরেও বার বার একই অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছে বাহিনী।
পুলিশি পরিসংখ্যান বলছে, অপহরণ করে খুনের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। অপহরণ করে কার্যসিদ্ধির কথা ভাবলেও বাধা এলে অভিযুক্তেরা খুন করছে অপহৃত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের। অভিযুক্তদের স্বার্থ ও জেদের কারণেই এমনটা ঘটছে। তবে তিলজলার ঘটনায় জানা গিয়েছে, সন্তানের আশায় প্রতিবেশীর শিশুকন্যাকে খুন করেছে অভিযুক্ত। মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বললেন, ‘‘গোটাটাই কুসংস্কার ও তা থেকে অপরাধপ্রবণতার ফল। পৃথিবীতে ধর্মের কারণে মানুষ পিছনের দিকে হাঁটছে। তিলজলার ঘটনাও তারই উদাহরণ।’’