মানাসলু অভিযানের আগে জাতীয় পতাকা হাতে বসন্ত সিংহরায় ও তাঁর সঙ্গী আরোহীরা। রবিবার, কলকাতা প্রেস ক্লাবে। নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বের সপ্তম উচ্চতম ধৌলাগিরি শৃঙ্গ অভিযানে গিয়ে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন বিশিষ্ট পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায়। ২০১৩ সালের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরেও অবশ্য পাহাড়ে যাওয়া থেমে থাকেনি তাঁর। বরং, একাধিক ছ’-সাত হাজারি শৃঙ্গে অভিযানে শামিল হয়েছেন তিনি। ধৌলাগিরি-অভিজ্ঞতার প্রায় ৯ বছর পরে, ফের আট হাজারি পথে এগোতে চলেছেন বসন্ত। ৬২ বছর বয়সে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম মানাসলু (৮১৬৩ মিটার) শৃঙ্গ অভিযানে যাচ্ছেন এভারেস্টজয়ী প্রথম অসামরিক বাঙালি এই পর্বতারোহী।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে বহু বয়স্ক বিদেশি পর্বতারোহী এভারেস্ট-সহ একাধিক আট হাজারি শৃঙ্গে অভিযান করেছেন। বার বার প্রমাণ করেছেন, বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। সেই পথে হেঁটেই কি তবে বাষট্টিতে মানাসলু অভিযানে? বসন্তের কথায়, ‘‘বিদেশি প্রবীণ পর্বতারোহীরা অভিযান চালানোর জন্য সেই রকম ভাবে জীবনযাপন করেন, সে রকম প্রশিক্ষণও নিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে তো অতটা সম্ভব নয়। তবে পর্বতারোহী মানে কিন্তু শুধুই শারীরিক সক্ষমতা নয়, তাঁর মানসিক জোর ও অভিজ্ঞতাও বটে।’’
বসন্ত অবশ্য এ বার একা নন। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী এই পর্বতারোহীর সঙ্গে অভিযানে সঙ্গী হচ্ছেন রানাঘাট ও কৃষ্ণনগরের আরও পাঁচ আরোহী— অসীমকুমার মণ্ডল, রুম্পা দাস, প্রশান্ত সিংহ, সুব্রত ঘোষ এবং সুমিত্রা দেবনাথ। তাঁদের কেউ স্কুলশিক্ষক বা শিক্ষিকা, কেউ পঞ্চায়েতকর্মী। আগামী ৩১ অগস্ট নেপাল যাওয়ার জন্য হাওড়া থেকে ট্রেনে চাপবেন তাঁরা। দীর্ঘ ৪০ দিনের এই অভিযানে খরচ পড়বে প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা।
এভারেস্ট, অন্নপূর্ণা, কাঞ্চনজঙ্ঘায় সফল অভিযান করার পরে ২০১৩ সালে ধৌলাগিরিতে গিয়ে থমকেছিল বসন্তের বিজয়রথ। খারাপ আবহাওয়ার জন্য সামিটের কিছুটা আগে থেকেই ফেরার পথ ধরতে হয়েছিল তাঁকে। তখনই ঘনিয়ে আসে বিপদ। সে বার হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাঁকে উদ্ধার করে নামিয়ে আনা হয়েছিল। তবে সেই অভিজ্ঞতা বসন্তের পাহাড়ি মনকে পাহাড় থেকে দূরে রাখতে পারেনি। বরং সাসের কাঙরি ফোর, মাউন্ট নুন, মাউন্ট রামজ্যাক, ব্ল্যাক পিক, ত্রিশূল— গত কয়েক বছরে একাধিক শৃঙ্গে অভিযান করতে ছুটেছেন। তবে এ বারের মানাসলু অভিযান যতটা না নিজের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি নবীন সঙ্গীদের কথা ভেবে— অকপটে জানাচ্ছেন বসন্ত।
মানাসলু অভিযানের জন্য কী ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন? বসন্তের কথায়, ‘‘নিয়মিত শারীরচর্চা তো করেছিই। সেই সঙ্গে গত ৩০ জুন এক দিনে চন্দনওয়াড়ি থেকে ৩২ কিলোমিটার হেঁটে অমরনাথ যাত্রা করেছি। পরের দিন অতটাই পথ হেঁটে ফিরেছি। সেটা অনেকটাই মানসিক জোর আর সাহস জুগিয়েছে।’’