ফাইল চিত্র।
ফার্স্ট হতে গিয়ে যেন কার্যত ফেল!
রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার এলাকা উন্নয়নে গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্পে টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। গত বছর সেই ঘোষণার পরেই তড়িঘড়ি প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিয়ে বরাহনগর পুরসভার কপালে এখনও পর্যন্ত জুটেছে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। যদিও পড়শি পুরসভা কামারহাটি ইতিমধ্যেই দু’টি পর্যায়ে পেয়েছে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা!
গঙ্গার পাড়-ঘেঁষা দু’টি পুরসভার বরাদ্দের ক্ষেত্রে এত ফারাক কেন?
রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, যে কোনও পুরসভার প্রকল্প রিপোর্ট যদি পুরোপুরি ঠিক ও সম্পূর্ণ থাকে, তা হলে বরাদ্দে কোনও অসুবিধা নেই। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘হয়তো বরাহনগর থেকে বেশি প্রকল্পের প্রস্তাব আসেনি। কিংবা ওঁরা যা পাঠিয়ে ছিলেন তাতে তথ্যগত সমস্যা ছিল। তাই কম পেয়েছেন।’’
বরাহনগরের চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিক বলেন, ‘‘ফেল করব কেন! গত বছর যখন প্রকল্পটি ঘোষণা হয়েছিল, তখনই আমরা তড়িঘড়ি করে সবার প্রথম রিপোর্ট জমা করেছিলাম। তাই হয়তো একটু সমস্যা হয়েছে।’’ কিন্তু এক বছরে কামারহাটি দু’টি পর্যায়ের টাকা পেলেও বরাহনগর প্রথমেই আটকে কেন? অপর্ণাদেবীর দাবি, ‘‘প্রথম পর্যায়ের কাজের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ ইতিমধ্যেই জমা দিয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের রিপোর্টও জমা দিয়েছি।’’ প্রথম পর্যায়ের টাকায় বরাহনগরের ১৫ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে— জলাশয় সংরক্ষণ, রাস্তা তৈরি, সবুজায়ন, পার্কে বসার জায়গার কাজ হচ্ছে। দফতরের এক কর্তা জানান, বরাহনগর থেকে এলইডি আলোর একটি প্রকল্প ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে।
নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে পুর এলাকার যাবতীয় উন্নয়ন, যেমন খুঁটি দিয়ে জলাশয় ঘিরে চার ধারে সবুজায়ন, রাস্তা তৈরি করে তার ধারে সবুজায়ন, এলইডি আলো লাগানো, গঙ্গার পাড়ে বসার জায়গা, উদ্যান তৈরি-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। তবে পুরসভা থেকে দায়সারা গোছের প্রকল্প রিপোর্ট পাঠালে চলবে না। সেক্ষেত্রে টাকা বরাদ্দের বদলে উল্টে সেটি বাতিল হবে।
দফতরের এক কর্তা জানান, ধরা যাক কোনও পুরসভা তাদের প্রকল্পে কয়েকটি জলাশয় সংরক্ষণের কথা উল্লেখ করেছে। ওটুকুই যথেষ্ট নয়। সেই সঙ্গে ওই জলাশয়ের সঠিক মাপজোক ও মানচিত্র-সহ হিসেব করে জানাতে হবে, কতগুলি পাইলিং খুঁটি ও কী কী প্রয়োজন। আবার কোনও পুরসভা জানাল, হাজারটি এলইডি আলো লাগবে। কিন্তু তাঁরা জানালেন না কোন কোন রাস্তা, কত মিটার অন্তর সেগুলি লাগানো
হবে। সে ক্ষেত্রে ওই প্রকল্পে টাকা মিলবে না। এমনকী যে টাকা বরাদ্দ হবে, তা গড়ে সব ওয়ার্ডে ভাগ করে দেওয়ার মানসিকতাও পুরসভাগুলিকে রাখলে চলবে না। কারণ সমস্ত ওয়ার্ড থেকে আসা প্রস্তাবই রিপোর্ট আকারে পাঠাতে হবে এবং সমস্ত ওয়ার্ড মিলিয়েই টাকাগুলি বরাদ্দ করা হবে।
দফতরের এক কর্তা জানান, অনেক পুরসভাতেই দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের অভাব রয়েছে। তাই সঠিক ভাবে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে না। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘প্রথম থেকেই বাইরের বিশেষজ্ঞকে দিয়ে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করিয়ে ছিলাম। পরে
তা মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে তবেই গ্রিন সিটি মিশনে জমা দিয়েছি।’’ কামারহাটিতে ইতিমধ্যেই গ্রিন সিটি মিশন প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। বি টি রোডে লাগানো হচ্ছে এলইডি আলো।
তবে এ বার আর কোনও ত্রুটি রাখতে চান না অপর্ণাদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বারে আমরাও বাইরের একটি সংস্থাকে দিয়েই রিপোর্ট বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম। এখন কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেই সব চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদেরও আরও সহযোগিতা করতে হবে।’’