শেষ দু‘বছরে বিআইএনের নির্দিষ্ট ‘মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস’ ক্লিনিকে প্রায় ২০০ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। ফাইল চিত্র।
আচমকাই দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা। কিংবা শরীরের কোনও অংশের অনুভূতি ক্রমশ চলে যাওয়া। কারও আবার দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। সঙ্গে চরম ক্লান্তি। প্রাথমিক ভাবে এমন সমস্যাকে বেশির ভাগ লোকজনই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু স্নায়ুরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই সমস্যাগুলি মস্তিষ্ক ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জটিল রোগ ‘মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস’-এর প্রাথমিক লক্ষণ।
মূলত কমবয়সিদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। আবার তাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভাবে মহিলাদের সংখ্যা বেশি। বুধবার, বিশ্ব মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস দিবস পালন করল এসএসকেএমের বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (বিআইএন)। সেখানে ওই রোগে আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা এসে অসুখকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অন্য সমস্যাগুলি তুলেধরলেন। সমস্যা সমাধানের উপায়ও বললেন চিকিৎসকেরা। জানা যাচ্ছে, শেষ দু‘বছরে বিআইএনের নির্দিষ্ট ‘মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস’ ক্লিনিকে প্রায় ২০০ জন রোগীর চিকিৎসা হয়েছে। যার মধ্যে ৬০-৭০ শতাংশই মহিলা। স্নায়ুরোগের শিক্ষক-চিকিৎসক অলোক পণ্ডিত, শৌভিক দুবে এবং সিনিয়র রেসিডেন্ট দেবলীনা মুখোপাধ্যায়, পিয়ালী সরকার, স্বাতী কুমারের দল ওই ক্লিনিকের দায়িত্বে রয়েছেন। এ দিন তাঁরাই রোগীদের সঙ্গে কথোপকথনে অংশ নেন।
বিআইএনের ওই ক্লিনিকের ইন-চার্জ, চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, ‘‘১৮ থেকে ৪৫ বছরের বয়সিদেরই সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ঠিক সময়ে এর চিকিৎসা শুরু করা খুবই জরুরি। কোনও উপসর্গকেমামুলি ভেবে উপেক্ষা করলে চলবে না।’’ দেশ জুড়ে ‘মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস’-এর উপরে একটি গবেষণা শুরু হয়েছে। তাতে এই রোগ কাদের হচ্ছে, কোন বয়সে রোগেরআধিক্য বেশি, চিকিৎসায় সাড়া কেমন— এই সমস্ত কিছুই দেখা হচ্ছে। রাজ্যে বিআইএন-এর তরফে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর হিসেবে রয়েছেন বিমানই।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই রোগে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের উপরে প্রভাব পড়ে। আর এই রোগে সব থেকে আগেক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘মায়েলিন’ (স্নায়ুকে সুরক্ষা প্রদানকারী আস্তরণ)। তাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্নায়ু আক্রান্ত হতে থাকে। এর জেরে দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়া, হাত-পায়ে জোর না থাকা, দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়া, অনুভূতি চলে যাওয়া, প্রস্রাবে নিয়ন্ত্রণ না থাকার মতো সমস্যা পাকাপাকি ভাবে দেখা যায়। চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, এই রোগ বার বার হতে পারে। অর্থাৎ চোখ আক্রান্ত হওয়ার পরে আবার ভারসাম্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, এই রোগের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা এবং বার বার আক্রান্ত হওয়া আটকাতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই চিকিৎসা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। এসএসকেএম সূত্রের খবর, সেখানে বার বার ওই রোগে আক্রান্তদের ডে কেয়ারে ভর্তি করে মেরুদণ্ড থেকে জল বার করার পরিষেবা এবং অন্যান্য পরীক্ষা, আইভি ইঞ্জেকশন এবং দামি ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।