Ballygunge

Ballygunge Bypoll: ভিড় নেই কোথাও, দিনভর বুথবিমুখ বালিগঞ্জ

করোনার দাপটে বারো মাসে তেরো পার্বণ না হোক, গত এক বছরে তিন-তিনটি ভোট-পার্বণের সাক্ষী থেকেছে বালিগঞ্জ।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

বুথের বাইরে রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে পুলিশ। অদূরেই আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান। চারপাশ প্রায় ফাঁকা। ভোটগ্রহণ কি এখনও শুরু হয়নি? ঘড়ির কাঁটা অবশ্য বলছে, ভোটগ্রহণ অনেক আগেই শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। তা হলে ভোটার কোথায়? প্রশ্ন করতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক জওয়ান বলে উঠলেন, ‘‘দু’টি বুথে প্রায় ১৮০০ ভোটার। কিন্তু এত বেলা হয়ে গেল, এখনও দুশোর গণ্ডি পেরোয়নি! দেখি, বিকেলের দিকে কী হয়!’’ বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তিলজলার শ্রীগুরু রবিদাস পার্কের এই ছবিই দিনভর দেখা গেল এলাকার বেশির ভাগ বুথে।

Advertisement

করোনার দাপটে বারো মাসে তেরো পার্বণ না হোক, গত এক বছরে তিন-তিনটি ভোট-পার্বণের সাক্ষী থেকেছে বালিগঞ্জ। একে কাজের দিন, তার উপরে কয়েক মাস অন্তর একটি করে ভোটই কি বুথবিমুখ করে তুলল বালিগঞ্জের জনতাকে? মঙ্গলবার সারা দিনের চিত্র এই প্রশ্নই তুলে দিল। প্রার্থীরা যদিও গলা ফাটিয়ে বলে গেলেন, সকলে ভোট দিতে আসুন। কেউ কেউ আবার বললেন, বেলা বাড়লে ভোটের শতাংশ বাড়বে। কিন্তু বালিগঞ্জের ভোটারদের মধ্যে উৎসাহের কোনও তারতম্য দিনের শেষ লগ্নেও দেখা যায়নি।

এ দিন সকাল থেকেই প্রার্থীরা কার্যত এলাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে সরব হয়েছেন দিনভর। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ি থামিয়ে ভোটের দিনের রুটিন-তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশও। কিন্তু এত আয়োজনের পরেও ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়নি কোথাও। ভোট কেন্দ্র কার্যত থেকেছে জনবিরল। ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের সে ভাবে দেখা না মিললেও পান থেকে চুন খসলেই তেড়ে যেতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।

Advertisement

ভোটারদের দেখা নেই কেন? এক ভোটদাতা বললেন, ‘‘বালিগঞ্জে আর কবেই বা মানুষ লাইন দিয়ে ভোট দেয়! কাজ বন্ধ করে কে ভোট দিতে আসবেন বলুন তো? তার উপরে এত গরম। ছুটির দিনে হলে হয়তো আরও কিছু ভোটার আসতেন।’’ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের বুথ থেকে বেরিয়ে এক যুবক অবশ্য জানালেন, একে রোদ, তার উপরে অফিসে যাওয়া আছে। তাই সকাল সকাল ভোট দিতে এসে পড়েছেন তিনি। অতটা ফাঁকা বুথ দেখে তিনিও একটু অবাক।

সকালের দিকে তিলজলার কয়েকটি বুথে অবশ্য ভোটারদের লাইন দেখা গিয়েছে। দুপুরে আদি বালিগঞ্জ বিদ্যালয়ের কাছে বুথের বাইরে দেখা গেল, রাস্তায় যানশাসন করছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দুই জওয়ান। মোটরবাইক চালিয়েই পাশের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে এলেন এক ব্যক্তি। তিনি বুথের দিকে এগোতেই হাঁক পারলেন এক জওয়ান—‘‘ইয়ে বাইক কিসকা হ্যায়? বুথকে সও (একশো) মিটার কা অন্দর কিঁউ রাখা?’’ কথা শুনে ফিরে এসে বাইক সরাতে সরাতেই ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘এই তো মাস তিনেক আগে ভোট দিতে এসে এখানেই বাইক রাখলাম। তখন তো কড়াকড়ি ছিল না। কখন যে কী হয়!’’ বাইক সরিয়ে বুথে ঢুকে গেলেন তিনি।

সকাল থেকেই কড়াকড়ির এই চিত্র চোখে পড়েছে বালিগঞ্জের অধিকাংশ বুথে। ভোটারদের সঙ্গে মাস্ক ও জীবাণুনাশক নিয়ে কড়াকড়ি করেছেন বুথের স্বাস্থ্যকর্মীরা। যে কড়াকড়ির কারণে বুথে ঢুকতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে ফিরে যেতে হয় তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কেও। ভোটের কারণে এ দিন গড়িয়াহাটের বাজার বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানালেন, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পুলিশ দোকান বন্ধ রাখতে বলেছে।

উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বালিগঞ্জের বাকি এলাকা কিছুটা সরগরম থাকলেও এ বছর একেবারে ভিন্ন ছবি ছিল একদা রাজ্যের মন্ত্রী, প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আবাসন চত্বরে। গেটের বাইরে উৎসাহী কর্মীদের কোনও ভিড় চোখে পড়েনি। প্রয়াত মন্ত্রীর সেই আবাসনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘ভোটের সময়ে কত লোকের ভিড় হত এখানে। দাদাও ব্যস্ত থাকতেন। বাড়ি, ক্লাব, এ-দিক, ও-দিক করে বেড়াতেন। কিন্তু আজ দাদা নেই, তাই সেই ভিড়ও নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement