রণকৌশল: পাশের বাড়ির এই জানলা দিয়েই বাগড়ি মার্কেটে জল দেওয়ার চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
বাগড়ি মার্কেটের গা ঘেঁষে বহুতলের চারতলায় ন’শো বর্গফুটের একটা দু’কামরার ছোট ফ্ল্যাট। সেই বসতবাড়ির বাসিন্দারা তাঁদের ফ্ল্যাটটি কার্যত ছেড়ে দিয়েছেন দমকলকর্মীদের হাতে। এই বাড়িই এখন হয়ে গিয়েছে একটা ছোটখাটো দমকলকেন্দ্র। বাড়ির শোয়ার ঘরের একটি জানলা দিয়ে গত দু’দিন ধরে হোসপাইপের মাধ্যমে জল দেওয়া হচ্ছে একদম পাশে জ্বলতে থাকা বাগড়ি মার্কেটের চারতলায়।
বাগড়ি মার্কেটের বি-ব্লক ঘেঁষা চারতলা এই ফ্ল্যাটেই বছর তিরিশের প্রণব রাঠোর তাঁর পরিবার নিয়ে থাকেন। বাবা, মা, স্ত্রী, দিদিকে নিয়ে তাঁর সংসার। প্রণববাবু জানান, শনিবার মাঝ রাতে যখন আগুন লাগে তখন হইচইয়ে তাঁদের সকলের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে প্রণববাবুরা দেখেছেন কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল আগুন। কিন্তু সেই আগুন যে এত দ্রুত তাঁদের বাড়ির উল্টো দিক পর্যন্ত চলে আসবে তা ভাবতে পারেননি তাঁরা। প্রণববাবু বলেন ‘‘বাগড়ির আগুন ছড়ায় এ ব্লক থেকে। আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিক উল্টো দিকে বাগড়ির বি ব্লকের চারতলা। আগুন যে এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে আমরা ভাবতে পারিনি।’’
প্রণববাবু জানান, রবিবার ভোরে তিনিই দমকলকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, তাঁদের বাড়ির জানলা দিয়ে জল দিলে কিছুটা সুরাহা হতে পারে। দমকলকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে চারতলায় উঠে এসে ওই জানলা থেকে হোসপাইপ দিয়ে জল দিতে শুরু করেন। তার পর থেকে প্রণববাবুদের ওই জানলা কার্যত দখল
করে নিয়েছে দমকল। মঙ্গলবারও দেখা গেল প্রণববাবুর ঘরের জানলা দিয়ে নাগাড়ে বাগড়ির চারতলায় জল দেওয়া চলছে।
এ দিন গিয়ে দেখা গেল, গোটা ফ্ল্যাটেই দমকলকর্মীদের জিনিসপত্র ছড়ানো ছেটানো। ঘরের চার দিকে মেঝেতে ছড়ানো দমকলকর্মীদের টুপি, হোসপাইপ। ধীরেশবাবু স্ত্রী নিশা বলেন, ‘‘রাতে আমরা পাশে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে থাকছি। বিদ্যুতের লাইন তো কাটা। তাই সন্ধ্যার পরে অন্ধকার আর গরমের মধ্যে বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না।’’
প্রণববাবু যে বহুতলে থাকেন তার একতলায় তাঁর মিষ্টির দোকান। সেই দোকানও আপাতত বন্ধ।
প্রণববাবু বলেন, ‘‘তিন দিন ধরে বাড়ির জানলা দিয়ে দমকল কর্মীরা জল দিচ্ছেন। আমরা নিজেরাও কী ভাবে হোসপাইপ দিয়ে জল দিতে শিখে নিয়েছি ওঁদের কাছে। গতকাল বিকেলে দমকল কর্মীদের বলছি আপনারা বিশ্রাম নিন। আমরা জল দিয়ে দিচ্ছি।’’ ওই বাড়ির জানলা দিয়ে জল দিতে দিতে এক দমকলকর্মী এ দিন বললেন, ‘‘এই জানলাটা দিয়ে জল দিতে খুব সুবিধা হচ্ছে। এখান থেকে জল দেওয়ার পরেই বি-ব্লকের চারতলার আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’’