বিসর্জন: দিনের বেলায় প্রকাশ্যেই চলছে অবাধ মূত্রত্যাগ। বুধবার, বাবুঘাট সংলগ্ন ইডেন গার্ডেন্স স্টেশনের পাশে। নিজস্ব চিত্র
খাতায়কলমে শেষ দিন ছিল বুধবার। তবে বাবুঘাটে পুণ্যার্থীদের শিবির চলবে আরও দু’দিন। তার পরেও সাত দিন শহরবাসীকে নরকযন্ত্রণা সহ্য করতে হবে! এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা।
বুধবারই ছিল গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির শেষ স্নান। পুরসভা সূত্রের খবর, পুণ্যার্থীদের জন্য বাবুঘাটের শিবির চালু থাকবে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। তার পরে চত্বর পরিষ্কার করে আগের চেহারায় ফিরিয়ে দিতে কম পক্ষে সাত দিন সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। প্রতি বছরের মতো তত দিন ওই নরকযন্ত্রণা সহ্য করতে হবে জনসাধারণকে। পরিবেশ দূষণের এই পরিচিত চিত্র বদলাতে সম্প্রতি সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীদের একটি অংশ। তাঁদের দাবি, বইমেলার কারণে ময়দানে দূষণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় যখন তা অন্যত্র সরানো গিয়েছে, তখন বাবুঘাট থেকেও পুণ্যার্থী শিবির সরানোর তোড়জোড় শুরু হোক। পরীক্ষা করে দেখা হোক ওই এলাকার দূষণের মাত্রা।
পাশাপাশি জনগণের বিপুল টাকা শিবিরের কারণে খরচ করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের প্রশ্ন, বিপুল টাকা খরচ করে দূষণ বাড়ানোর অর্থ কী? কলকাতা পুরসভার হিসেব বলছে, ১২ দিন ধরে চলা পুণ্যার্থীদের শিবির পরিষ্কার করতে জঞ্জাল অপসারণ দফতরকে এক কোটি টাকার মতো খরচ করতে হয়। পুরসভার দাবি, এ বারেও দৈনিক প্রায় ৪০ মেট্রিক টন জঞ্জাল অপসারণ করা হয়েছে।
আরও খবর: জানলা দিয়ে লাফ, মেডিক্যালে আত্মঘাতী রোগী
ওই এলাকার দূষণ যে মাথাব্যথার বড় কারণ তা মনে করেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের মতে, শীতের রাতে কাঠ জ্বালিয়ে আগুন পোহানো এবং রান্না করায় যেমন ওই চত্বর এবং তার সংলগ্ন এলাকার বায়ু দূষিত হচ্ছে, তেমনই যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ইতিউতি পড়ে থাকা প্লাস্টিক, থালা-বাটি, খাবারের উচ্ছিষ্টে ভরে উঠছে এলাকা। সব মিলিয়ে ভারী হয়ে উঠেছে গঙ্গাতীরের বাবুঘাটের বাতাস।
এ দিন বাবুঘাটে গিয়ে দেখাও গেল সেই ছবি। তবে অন্য দিনের তুলনায় পুণ্যার্থীদের সংখ্যা এ দিন কমই ছিল। তার কারণ অবশ্য, বেশির ভাগ পুণ্যার্থীই শেষ স্নানের আগে গঙ্গাসাগরে পৌঁছে গিয়েছেন। বাবুঘাটের গঙ্গাসাগর শিবিরের ঠিক সামনেই উল্টো দিকে উট্রাম ঘাট লাগোয়া ফুটপাতেই তখন অবাধে মলমূত্র ত্যাগ চলছিল। গঙ্গায় ভাসতে দেখা গেল ফুল, প্লাস্টিক-সহ বর্জ্য। আগুন জ্বালাতে গাছের গুঁড়ি এবং ডালপালা পোড়ানোর কারণে ছাই পড়ে রয়েছে সেখানে।
আরও খবর: সল্টলেকে রাস্তা বেহাল, নজর নেই পুরসভার
কিন্তু জঞ্জাল পরিষ্কার করতে এত দিন কেন লাগবে? পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘শিবির পুরো না ভাঙা পর্যন্ত ওই চত্বর পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে সাত দিন লেগে যাবে।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, বাবুঘাট চত্বরের দূষণ মাপার জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন তিনি।
যদিও পুর কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘‘গঙ্গাসাগরের পুণ্যার্থী শিবির সরানো একটি ‘স্পর্শকাতর’ বিষয়। এত সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’’