বিদ্রোহের জেরে সোমবার বন্ধ রয়েছে বেলেঘাটা-শিয়ালদহ রুটের অটো। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পর থেকেই ‘বিদ্রোহের আবহ’ শহরের অটো রুটগুলিতেও। শাসক দলের খাস সমর্থক হিসাবে পরিচিত অটো ইউনিয়নের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভ।
সোমবার হঠাৎ করেই শহরের অন্যতম ব্যস্ত রুট শিয়ালদহ-বেলেঘাটার অটো চলাচল বন্ধ করে দেন চালকদের বড় অংশ। বেলেঘাটা বিল্ডিং মোড়ের কাছে সমস্ত অটো দাঁড় করিয়ে রেখে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ওই রুটে চলা বেআইনি অটো বন্ধ করতে হবে।
বিক্ষোভকারী চালকদের মধ্যেই ছিলেন বিপুল দাস। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রুটে ২৮৬টি অটোর পারমিট রয়েছে। সেই সংখ্যাই অনেক। আমরা পরিবহণ দফতরকে অনুরোধ করেছিলাম যাতে, এই রুটে আর নতুন করে অটোর পারমিশন না দেওয়া হয়।”বিপুলবাবুর দাবি, তারপরেও দেখা যায়রুট ভরে যাচ্ছে একের পর এক ‘ভুতুড়ে’ অটোতে। যার সংখ্যা কমপক্ষে ৪০টি। অন্য এক অটোচালক বলেন, ‘‘ওই ভুতুড়ে অটোর মালিক কে আমরা জানি না। পারমিট আছে কি না জানিনাতা-ও।” চালকদের অভিযোগ, সরকারি ভাবে সোনারপুর-বারুইপুরে নথিভুক্ত অটোও চলছে শহরের ওই রুটে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন বৈধ পারমিট থাকা অটোচালকরা।বিপুলের কথায়: ‘‘আগে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে দিনের শেষে রোজগার হত ৪৫০-৫০০ টাকা। এখন সেই রোজগারই কমে এসেছে ৩০০-৩৫০ টাকায়।”
আরও পড়ুন: জল আগে না সবুজ রক্ষা, উভয়সঙ্কটে পুরসভা
অটোচালকদের অভিযোগ, ইউনিয়নের নেতা এবং পরিবহণ দফতরের কর্মীদের আঁতাঁতেই এ ভাবে বাড়ছে অবৈধ অটোর রমরমা। এক অটোচালক বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে একটি অটো রুটে নামাতে খরচ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। সেখানে ওই সব ভুতুড়ে অটো রুটে নামছে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ করে। এবার আপনারাই বুঝুন কারা কত টাকা পাচ্ছে বেআইনি অটো নামিয়ে।”
গত সপ্তাহে একই কারণে তিন দিন অটো চলাচল বন্ধ ছিল বাগুইআটি-উল্টোডাঙা রুটে। সেখানকার ধর্মঘটে যাওয়া চালকদের অভিযোগ,‘‘আমাদের রুটে পারমিট রয়েছে ৩২০টি অটোর। কিন্তু চলে ৫৭০টি অটো। অর্থাৎ প্রায় আড়াইশোটি অবৈধ অটো চলে ওই রুটে! বিশ্বজিৎ দেবনাথ নামে বাগুইআটি রুটের এক অটোচালকের অভিযোগ, ‘‘লাখ লাখ টাকা দালালি নিয়ে খালি অফার লেটার দিয়েই চলছে অটো। কারও রুট পারমিট নেই। ইউনিয়নের নেতাদের দীর্ঘদিন ধরে বলার পরও কেউ কানে কথা তোলেননি।”
আরও পড়ুন: দাঁতের চিকিৎসা করাতে গিয়ে মৃত্যু তরুণীর
একই ছবি উত্তর শহরতলির বিভিন্ন রুটে। সোদপুর-ডানলপ বা নাগেরবাজার থেকে দমদম, চিড়িয়ামোড়— সব জায়গাতেই একই অভিযোগ অটোচালকদের। পরিবহন দফতর সূত্রে খবর, কলকাতা এবং শহরতলিতে ৪৭৫ টি অটো রুটের অনুমোদন রয়েছে। বৈধ পারমিট রয়েছে ৩১৮৬৬ টি অটোর। অটোচালকদের হিসাব অনুযায়ী কলকাতা শহর এবং শহরতলীতেই অবৈধ ভাবে চলছে প্রায় ১০ হাজার অটো, যা বৈধ অটোর এক-তৃতীয়াংশ।
যদিও ইউনিয়নের নেতারা এই সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। যেমন দিলীপ রায়। তিনি বেলেঘাটা-শিয়ালদহ অটো ইউনিয়নের সম্পাদক। তাঁর দাবি,‘‘আমাদের রুটে চলা সমস্ত অটোরই বৈধ নথি রয়েছে। সিপিএম-বিজেপি হাত মিলিয়ে অটো ইউনিয়নগুলোয় অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে।” অটোচালকদের পাল্টা বক্তব্য,‘‘নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই সবাই বিজেপি হয়ে যায়!’’