Crime

রাতে গাড়ি পাচ্ছি না, সঙ্গে পরিবার, সামনে নামিয়ে দেবেন? পুলিশ সেজে গাড়িতে উঠে চুরি

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২৯
Share:

ফাইল চিত্র।

‘‘এত রাতে একটাও গাড়ি পাচ্ছি না। সঙ্গে পরিবার রয়েছে। চিংড়িঘাটা মোড়ে একটু নামিয়ে দেবেন?’’ পরমা আইল্যান্ডের কাছে পুলিশের পোশাক পরে কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক জনের এমন অনুরোধ শুনে তাদের গাড়িতে তুলেছিলেন এক ব্যক্তি। শেষে বাড়ি ফিরে তিনি বুঝলেন, পুলিশ তো নয়-ই, তিনি যাদের গাড়িতে তুলেছিলেন, তারা আদতে চোর! কারণ, তারা নেমে যাওয়ার পরেই গাড়ি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে ল্যাপটপ এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রাখা একটি ব্যাগ!

Advertisement

এর পরে পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে অশোককুমার দে বিশ্বাস নামে ওই ব্যক্তি ফিরে পেয়েছেন তাঁর হারানো সামগ্রী। চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মীরা দে, লক্ষ্মী দে ও বিশ্বনাথ দে নামে তিন জনকে। বিশ্বনাথের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে পুলিশের পোশাক। শুক্রবার আদালতে তোলা হলে ধৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। চুরির জিনিসপত্র উদ্ধারে প্রগতি ময়দান থানার তদন্তকারী পুলিশকর্মীর কাজের প্রশংসা করেছেন লালবাজারের বড় কর্তারা।

গত সোমবার রাত ১০টা নাগাদ ঘটনার সূত্রপাত। অশোককুমার নিজের গাড়ি নিয়ে ইএম বাইপাস ধরে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। পরমা আইল্যান্ডের কাছে হাত দেখিয়ে তাঁর গাড়িটি দাঁড় করায় পুলিশের
পোশাক পরা, বছর ৪৯-এর বিশ্বনাথ। পুলিশ দেখে গাড়ি থামিয়ে দেন অশোককুমার। তখনই বিশ্বনাথ চিংড়িঘাটা মোড় পর্যন্ত তাদের পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। অশোককুমার জানিয়েছেন, বিশ্বনাথ নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে এক যুবক-সহ চার জন ছিল। বাকি তিন জন মহিলা। গাড়িতে যেতে যেতে বিশ্বনাথ নিজেকে কলকাতা পুলিশের কর্মী বলে দাবি করে। স্ত্রী, পুত্র ও ভাইয়ের বৌকে নিয়ে সে একটি অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে ফিরছে বলেও জানায়। এর পরে তারা চিংড়িঘাটা মোড়ে নেমে গেলে বিমানবন্দরে যান অশোককুমার। সেখান থেকে এক বন্ধুকে নিয়ে তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে নামিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে নিজের বাড়িতে ফেরেন। অভিযোগ, তখনই তিনি দেখেন, তাঁর ব্যাগটি উধাও।

Advertisement

রাতেই রবীন্দ্র সরোবর থানায় ছোটেন তিনি। সেখান থেকে তাঁকে প্রগতি ময়দান থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। কিন্তু প্রথমে ঘটনার কিনারা করতে পারছিলেন না তদন্তকারীরা। তবে অভিযোগকারী পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিকে যে সময়ে গাড়িতে তোলার কথা জানিয়েছিলেন, সেই সময়েরই একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পায় পুলিশ। সেই ফুটেজের সঙ্গে চিংড়িঘাটা মোড়ের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মিলিয়ে দেখা শুরু হয়। তাতেই পাওয়া যায় গাড়িতে ওঠার এবং নামার সময়ের ছবি।

এক তদন্তকারী পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ফুটেজে দেখা যায়, চিংড়িঘাটা মোড়ে গাড়ি থেকে নেমে তিন জন ডান দিকে গিয়েছে এবং তিন জন বাঁ দিকে। ডান দিকে যারা গিয়েছে, তাদের মধ্যে এক জন হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে নামছে, এমন ছবি ধরা পড়ে। দেখা যায়, তাদের মধ্যেই এক মহিলা ছিল, যে পা টেনে টেনে হাঁটছিল। বাতের সমস্যা থাকলে অনেকে ওই ভাবে হাঁটে।’’ এই সূত্র ধরেই তার ছবি নিয়ে চিংড়িঘাটা মোড়ের কাছে সুকান্তনগর এলাকায় খোঁজখবর শুরু করা হয়। পুলিশের দাবি, তাতেই খোঁজ মেলে মীরা নামে ওই মহিলার। তারই স্বামী বিশ্বনাথ। দু’জনকে গ্রেফতার করার পরে ধরা হয় বিশ্বনাথের ভ্রাতৃবধূ লক্ষ্মীকে। ওই তিন জনকে জেরা করেই উদ্ধার হয় চুরি যাওয়া সামগ্রী এবং পুলিশের পোশাক।

জানা গিয়েছে, বিশ্বনাথ আগে অটো চালাত। বেলেঘাটার এক অটো ইউনিয়নের একটি পদেও রয়েছে সে। তার সঙ্গে পুলিশেরও ভাল যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু কী করে সে ওই পুলিশের পোশাক পেল, তা নিয়ে লালবাজারের তরফে পরিষ্কার করে কিছু জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ তদন্তের পরেই বলা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এক পুলিশকর্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement