প্রতীকী ছবি।
রুট কতটা? যতটা তাঁরা চান ততটাই!
‘কাটা রুট’-এ গাড়ি চালানোর পুরনো রোগ ফিরে এসেছে শহরের অটোচালকদের মধ্যে। সোমবার মহালয়া থেকে সেই প্রবণতা এমন আকার নিয়েছে যে, শহরের মোড়ে মোড়ে অটো পেতেই কালঘাম ছুটছে যাত্রীদের। কোথাও আধ ঘণ্টা, কোথাও পঞ্চাশ মিনিটেরও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। বরাতজোরে যদিও বা অটো মিলছে, তবু চালকেরা পুরো রুট যেতে চাইছেন না। অভিযোগ, মাঝপথ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েই দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে!
মঙ্গলবার দুপুরে শোভাবাজার যেতে উল্টোডাঙায় অটোর অপেক্ষায় ছিলেন এক ব্যক্তি। প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষার পরে যদি বা অটো মিলল, তবু অটোচালক তাঁকে জানান যে খন্নায় নেমে যেতে হবে। পরিবর্তে দিতে হবে ১৫ টাকা। অথচ, উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজার পর্যন্ত ভাড়া ১২ টাকা। ওই ব্যক্তি বলছেন, ‘‘খান্নায় নেমে আবার অটো ধরলাম। খন্না থেকে শোভাবাজার মেট্রো পর্যন্ত এ বার ভাড়া ১০ টাকা। ১২ টাকার রাস্তা ২৫ টাকায় এলাম!’’
বেলা বাড়তে ছবি আরও ঘোরালো হয়। অভিযোগ, শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা যেতে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকাও। পুলিশি কড়াক়ড়ি, ট্র্যাফিক পুলিশের নজরদারির মধ্যেও দিনের পর দিন এমনটাই ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ ওই রুটের নিত্যযাত্রীদের একাংশের। সল্টলেকের বাসিন্দা সংগীতা চৌধুরী বললেন, ‘‘সেক্টর ফাইভ, বিধাননগর রেল স্টেশন থেকে অনেকেই এই পথে মধ্য কলকাতার দিকে যান। কিন্তু হাজার প্রতিবাদেও পরিস্থিতি বদলায় না। অটোচালকেরা মুখে কথা বলেন না। যাবে কি যাবে না বুঝতে বুঝতেই গাড়ি গায়ে তুলে দেন!’’
উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্ক থেকে কাঁকুড়গাছি, আর জি কর থেকে বেলেঘাটা আইডি, সিআইটি রোড থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, নিমতলা ঘাট থেকে মানিকতলা— সর্বত্রই চিত্র এক। দক্ষিণ কলকাতার তারাতলা-জোকা, টালিগঞ্জ-গড়িয়া, গোলপার্ক-গড়িয়া, তারাতলা থেকে রামনগর পর্যন্ত সব রুটেই মাসের শুরু থেকে বাড়তি ভাড়া চাওয়া এবং কাটা রুটে গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
অটোচালকেরা অবশ্য এর যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন পুজোকেই। গড়িয়া-গোলপার্ক রুটের এক অটোচালক বললেন, ‘‘পুজোর এই সময়টায় আমরা বাড়তি দু’টো টাকা চাইতেই পারি।’’ উল্টোডাঙা-জোড়াবাগান রুটের এক অটোচালকের যুক্তি, ‘‘পুজোর জন্য বাড়তি ভাড়া চেয়েও পাই না, তখন কাটা রুটই ভরসা।’’
দক্ষিণ কলকাতার অটো রুটগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত, আইএনটিটিইউসি সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী অবশ্য বললেন, ‘‘এ জিনিস মানা হবে না। অটোওয়ালাদের উপরে আমাদের দল নির্ভরশীল নয়। নাম করে, জায়গা ধরে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।’’ উত্তর কলকাতার আইএনটিটিইউসি নেতা মানা চক্রবর্তী আবার মানছেন, অটোচালকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দীর্ঘ দিন থেকে উঠলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছে পরিবহণ দফতরও। পরিবহণমন্ত্রী এ নিয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও দফতরের এক আধিকারিক বললেন, ‘‘অটো স্থানীয় নেতারাই সামলান। ওঁদের উপর দিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের।’’ কলকাতা পুলিশের তরফেও অটো-রাজ নিয়ন্ত্রণে একাধিক পদক্ষেপ করা হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা শুধু বলেন, ‘‘পুজোর সময় ওঁদের বাড়াবাড়ি আরও বেড়ে যায়। দেখি কী করা যায়!’’
অতএব, পুজোর মুখে রুটের মাপ ঠিক করছেন অটোচালকেরাই।