শোভরাজ এবং রোহিত রায় (ডান দিকে)।
হাওড়ার চিকিৎসককে অপহরণ করে মোটা টাকা মুক্তিপণ আদায়ের ছক কষেছিল এক তরুণী। ওই চিকিৎসকের বাড়িতে
পরিচারিকার কাজ করত সে। মাস দুয়েক আগে আচমকা বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় কাজ থেকে তাকে বার করে দিয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। হাওড়ার রামরাজাতলা এলাকার রামচরণ শেঠ রোডের বাসিন্দা চিকিৎসক অপহরণ ঘটনার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের হাতে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসক দেবীশঙ্কর দে-কে দিনের বেলায় রাস্তা থেকে তাঁর গাড়ি-সহ অপহরণ করে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছিল অপহরণকারীরা। তদন্তে নেমে জানা যায়, ইছাপুর ঝিলপাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী পরিচারিকা কয়েক জন স্থানীয় কমবয়সি দুষ্কৃতীর সাহায্যে এই পরিকল্পনা করে। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের হাতে দুষ্কৃতীদের দু’জন হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় গোটা পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
ধৃত দুষ্কৃতী জিৎ গোরা এবং সংগ্রাম দাস ওরফে সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ শোভরাজ দত্ত ওরফে রাজ-সহ আরও চার-পাঁচ জনের নাম এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হিসেবে জানতে পেরেছে। বুধবারই শোভরাজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, টানা জেরার মুখে ভেঙে পড়ে শোভরাজ আরও এক শাগরেদের নাম বলে দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে হাওড়া পুলিশ ও হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের একটি দল চ্যাটার্জিহাট থানা এলাকার শাস্ত্রী নরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি রোড থেকে রোহিত রায় নামে ১৭ বছরের এক কিশোরকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের আলাদা ভাবে জেরা করে পুলিশ ওই তরুণীর নাম পায়। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।
হাওড়ার গ্রামীণ পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি ওই চিকিৎসকের বাড়িতে এক জন কাজ করত। চিকিৎসক তাকে সরিয়ে দেন। সেই ঘটনার মূল চক্রান্তকারী।’’
ক্লাবের ছেলেদের সাহায্যে ফিরে আসার পরদিন ওই চিকিৎসক জানান, অপহরণকারীরা তাঁর গতিবিধি, এমনকি কোন কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁর টাকা আছে, সে সবের বিস্তারিত বিবরণ যে ভাবে দিয়েছিল তাতে অবাক হন তিনি। তদন্তকারীরা বলেন, ‘‘তখনই বোঝা গিয়েছিল পরিচিত কেউ এই ঘটনায় যুক্ত। তাই চিকিৎসকের নার্সিংহোম ও বাড়ির কর্মচারীদের সন্দেহ করা হচ্ছিল। জানা যায়, টাকা চুরির অভিযোগে সম্প্রতি এক পরিচারিকাকে ছাটাই করেছিলেন চিকিৎসক।’’
এ দিন ওই পরিচারিকা প্রসঙ্গে চিকিৎসক বলেন, ‘‘তরুণী টাকা হাতিয়ে পুজোর আগে বেপাত্তা হয়ে যায়। পরে ফিরে আসলেও আর কাজে নিইনি।’’