—প্রতীকী চিত্র
ছেড়ে দিয়ে এ বার যেন বেঁধে আনা!
জেলার সরকারি হাসপাতাল কিংবা কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতাল। সর্বত্রই ভুয়ো চিকিৎসকের অস্তিত্ব আসছে। দীর্ঘ সময় ধরে ‘জাল’ ডিগ্রি দেখিয়ে চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের বেশ কিছু নামী হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক ভুয়ো চিকিৎসক। এই ঘটনায় এ বার নানা ক্ষেত্রে সতর্কতা বাড়াল স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ন’টি হাসপাতাল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য দফতরে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। কি়ডনি, লিভারের পাশাপাশি ফুসফুস এবং
হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের জন্যও অনুমতি চেয়েছে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল।
নিয়ম অনুযায়ী, আবেদনকারী হাসপাতালের অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো, নিজস্ব ব্লাড ব্যাঙ্ক এবং চিকিৎসকদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেখে অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার যে চিকিৎসকেরা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাঁদের রেজিস্ট্রেশন নম্বরও যাচাই
করা হবে। তার পরে অনুমতি পাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হাসপাতালগুলি।
অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ সচেতন হলেই ভুয়ো চিকিৎসকদের রমরমা বন্ধ করা যাবে। রোগীরা যাতে প্রতারিত না হন, সেই জন্যই বাড়তি সচেতনতা নেওয়া হচ্ছে। চারপাশের ঘটনা দেখেই এই সিদ্ধান্ত।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, অধিকাংশ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগের সময়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক ভাবে যাচাই করা হয় না। যে সব চিকিৎসক ভিন রাজ্য বা দেশের মেডিক্যাল কলেজের
শংসাপত্র দেখান, সেগুলিও যাচাই করা হয় না। ফলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি দেখিয়ে ‘চিকিৎসকেরা’ নিযুক্ত হচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সেই সব মেডিক্যাল কলেজের কোনও অস্তিত্বই নেই। কর্তৃপক্ষের এই গাফিলতির জেরে প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা শুরু করেছে। যেমন শুক্রবার রাজ্য বিজেপি দাবি তুলেছে এই ভুয়ো চিকিৎসকদের মধ্যে কত জন সরকারি হাসপাতালের, তাঁদের নিয়োগপত্রই বা কারা দিয়েছিলেন, তা শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
দলের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র রাজ্য শাখার সম্পাদক এবং কলকাতা শাখার সভাপতি দুজনেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। তাঁরাও কতটা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন? কেন আইএমএ শংসাপত্র খতিয়ে দেখে তবেই চিকিৎসকদের সদস্য করার ব্যবস্থা চালু করেনি? আইএমএ কিছু জানে না, তা হতে পারে না!’’
তবে সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘শুধু তৃণমূল জমানায় এই ভুয়ো ডাক্তাররা রয়েছেন, এমন নয়। বাম জমানা থেকেই শুরু হয়েছে এই কাজ।’’ বিষয়টি নিয়ে আগামী ৭ জুন রাজ্য বিজেপি স্বাস্থ্য দফতরে স্মারকলিপি দেবে বলেও জানিয়েছেন সুভাষবাবু।