Kolkata Hit and Run Case

বিছানা উঁচু কেন? পরীক্ষা করতেই হদিস অভিযুক্তের

নিউ টাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে গত রবিবার, পয়লা জানুয়ারি বিকেলে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় শাকিল আহমেদ নামে ভূগোলের স্নাতকোত্তরের ওই পড়ুয়ার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩৩
Share:

নিউ টাউন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গাড়ির গতি কমাতে আগে ছিল দু’টি স্পিড ব্রেকার। দুর্ঘটনার পরে তৈরি করা হয়েছে আরও ছ’টি স্পিড ব্রেকার। নিজস্ব চিত্র।

শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশ জেনেছিল, অভিযুক্ত সেখানে নেই। এ ঘর-সে ঘর ঘুরেও দেখা মেলেনি তাঁর। আচমকাই পুলিশকর্মীদের নজর যায় বক্স খাটের দিকে। কেমন যেন উঁচু হয়ে রয়েছে বিছানাটা! সন্দেহ হওয়ায় বিছানা পরীক্ষা করতেই দেখা যায়, সেখানেই লুকিয়ে অভিযুক্ত। এর পরেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত, ছাপাখানা ব্যবসায়ী প্রতীন খাঁড়াকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

নিউ টাউনের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সামনে গত রবিবার, পয়লা জানুয়ারি বিকেলে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় শাকিল আহমেদ নামে ভূগোলের স্নাতকোত্তরের ওই পড়ুয়ার। তার পরেই সেই গাড়ি ও অভিযুক্ত চালককে ধরার দাবিতে রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিউ টাউনে বিক্ষোভ দেখান আলিয়ার পড়ুয়ারা। রাস্তার সিসি ক্যামেরা বিকল থাকায় অভিযুক্তের সন্ধান পেতে প্রাথমিক ভাবে সমস্যায় পড়েছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত সোমবার সন্ধ্যার পরে প্রতীনকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় টেকনো সিটি থানা।

মঙ্গলবার অভিযুক্তকে বারাসত আদালতে তোলা হলে ছ’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ প্রতীনকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে নিতে চাইলে জামিনের আবেদন জানান তাঁর দুই আইজীবী সুদীপ্ত বসু ও ভাস্কর লাহিড়ী। তাঁরা বিচারককে জানান, প্রতীনকে গ্রেফতার এবং গাড়ি উদ্ধার করার পরেও তাঁদের মক্কেলকে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর মামলায় ফাঁসাতে চাইছে পুলিশ। সরকারি আইনজীবী বিকাশরঞ্জন দে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে জানান, দুর্ঘটনার পিছনে কোনও উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা জানতে অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

নিউ টাউনের ডিসি প্রবীণ প্রকাশ সোমবারই জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটি একটি সংবাদপত্রের নামে নথিভুক্ত। সেই সংস্থার তরফে একটি গাড়ি ব্যবহারের জন্য প্রতীনকে দেওয়া হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার দিন তিনি ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়েকথা বলার জন্য নিউ টাউনের ইকো আর্বান ভিলেজের ফ্ল্যাটে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতীন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালিয়ে ট্যাংরার ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন।

তদন্তকারীরা জানান, পুলিশের কাছে প্রতীন দাবি করেছেন, ওই ছাত্র আচমকা তাঁর গাড়ির সামনে চলে এসে ধাক্কা খান। তিনিও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গার্ডরেলে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যান। প্রতীনের গাড়িটি যে সংস্থার তৈরি, ধাক্কার চোটে সেটির লোগো রাস্তায় খুলে পড়ে যায়। ওই লোগোর সূত্র ধরেই প্রতীনের খোঁজ শুরু করেছিল পুলিশ।

বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের দাবি, সোমবার সকালে এক চালককে দিয়ে গাড়িটি সার্ভিস সেন্টারে পাঠান প্রতীন। তত ক্ষণে পুলিশ সংস্থার লোগো ধরে তাদের বিভিন্ন সার্ভিস সেন্টারে গাড়িটির খোঁজ শুরু করে দিয়েছে। তদন্তকারী এক আধিকারিকবলেন, ‘‘আনন্দপুরে যখন খোঁজ করতে যাওয়া হয়, ঘটনাচক্রে তখনই প্রতীনের চালক গাড়িটি নিয়ে সেখানে পৌঁছন। তাঁকে আটক করেপ্রতীনের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়।’’

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার পরে প্রতীন ট্যাংরার ফ্ল্যাট ছেড়ে বিরাটিতে শ্বশুরবাড়িতে এসে উঠেছিলেন। তাঁর পরিজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সেখানে যায় পুলিশ। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘরে ঢুকে নজর যায় বিছানায়। সেটি পরীক্ষা করতেই খোঁজ মেলে অভিযু্ক্তের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement