সৃষ্টি: শিল্পী যোগেন চৌধুরীর আঁকা ছবিতে করোনাভাইরাস।
সদ্য ফোটা জবাফুলের পাপড়ি কিংবা একটি তপ্ত ডিমের পোচ। কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি কিংবা দিল্লির ইতিহাসের সৌধ। আকাশের চাঁদ-সূর্য, ঘুড়ি থেকে বাচ্চাদের খেলার বল, সব কিছুই এখন ছায়া দেখছে তার। বিচিত্র রোঁয়ায় সজ্জিত গোলাকার নোভেল করোনাভাইরাসের ছবিটা এখন শিল্পেরও হাতিয়ার। ছবি-পোস্টার-লেখায় কলকাতা থেকেই গোটা দুনিয়ায় এক শিল্পের আন্দোলনের ডাকও ছড়িয়ে পড়ছে।
একটি গ্রাম্য মেলায় খেলনা-ঝুমঝুমি-গ্যাসবেলুন বিক্রির ছবিতেও ভাইরাসের আদল তুলে এনেছেন যোগেন চৌধুরী। সঙ্গে লেখা, ‘আমি করোনা বিক্রি করি’। শ্লেষধর্মী শিল্পের হয়ে সওয়াল করে ওই ছবির বার্তা, ‘মেক স্যাটায়ার ইন আর্ট গো ভাইরাল’। বুদ্ধমূর্তির অবয়ব শান্তির ডাক দিচ্ছে। চুলের খোঁপাতেও ভাইরাসের আভাস। সঙ্গে স্লোগান, চুলের নতুন কেতা ছোঁয়াচে হোক। এক ধরনের সৃষ্টিশীলতা বা আশাবাদের ছোঁয়ায় ‘ছোঁয়াচে’ বা ‘ভাইরাল’ শব্দটার মানেই পাল্টে দিতে চাইছেন এক ঝাঁক শিল্পী, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, কার্টুনিস্ট, বিজ্ঞাপন-স্রষ্টা, কবি-লেখকের দল। সবারই হ্যাশট্যাগ, গো ভাইরাল টু স্টপ দ্য ভাইরাস।
পয়লা বৈশাখের কাছেপিঠে ভাবনাটার সলতে পাকিয়েছিলেন তরুণ বিজ্ঞাপন-নির্মাতা উত্তরণ চৌধুরী। বাড়িতে নবজাতক শিশু, অশীতিপর বাবার অসুস্থতা এবং দুনিয়া জুড়ে অতিমারির অনিশ্চয়তার আবহে অবসাদ থেকেই ভাইরাল শব্দটার অভিঘাত পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। “মানসিক চাপের মধ্যেই মনে হল ভাইরাসটাকে বেশ অভিনব দেখতে তো! চোখে সর্ষেফুলের মতো সকলেই সব কিছুতে ভাইরাসটাকে দেখছেন। সেটাই যত ক্রিয়েটিভ খেয়াল উস্কে দিল।”— বলছিলেন উত্তরণ। একটা বলের চারপাশে কাঁটা চামচ গেঁথে সেই ছবির পাশে তিনি লেখেন খাবার ছোঁয়াচে বা ভাইরাল হোক। ‘গো ভাইরাল’ শব্দটার ব্যঞ্জনা ছুঁয়ে এর পরেই বিভিন্ন শিল্পীর সৃষ্টির বান ডেকেছে। ভাইরাসের আদলে রং-বেলুনের ছাপের খুশি ছড়িয়ে দিয়েছেন সনাতন দিন্দা।
আরও পড়ুন: ঘরবন্দি কবিপক্ষে ছক ভাঙা রবি-স্মরণ
ত্রিমাত্রিক পথচিত্র বা দুনিয়ার দীর্ঘতম চক-পেন্টিংয়ের জন্য পরিচিত ফিলাডেলফিয়ার ট্রেসি লি স্টাম ভাইরাসের আদলে ভারতীয় রঙ্গোলির ভাব এনেছেন। হিরণ মিত্রের বার্তা, শুভাশিস ভাইরাল হোক। পার্থ দাশগুপ্ত পোস্টকার্ডে ডাকটিকিটের ছাপ বা পোড়ামাটির শিল্পের কথা মনে করিয়েছেন। হাঙ্গেরির লেখক-শিল্পী এস্টর ল্যাংকসের বার্তা পড়াশোনা ছোঁয়াচে হোক। ডিমের পোচের ছবিতে কেউ বলছেন, ঘরোয়া রান্না ছোঁয়াচে হোক। সবুজ বাঁচানো, ঐতিহ্য রক্ষা থেকে প্রেম, জন্ম— কত কিছু ভাইরাল হওয়ার বার্তা উঠে আসছে। জয় বাবা ফেলুনাথের নাইফ থ্রোয়িংয়ের দৃশ্য মনে করিয়ে সত্যজিতের ছবি ভাইরাল করা কিংবা রবীন্দ্র পাণ্ডুলিপির সুদৃশ্য পাতার আদল এনে উৎকর্ষ ভাইরাল করারও বার্তা রয়েছে। সোদপুরের বধূ কাঞ্চন সাউ রান্নাঘরের ডাল দিয়ে ছবি করেছেন। বেঙ্গালুরুর ১২ বছরের বালিকা অদিতি আশিসও এই শিল্পের টানে শরিক।
আরও পড়ুন: বার বার বেরোলে ধরা পড়ছে ক্যামেরায়
শ্রীজাত, যশোধরা রায়চৌধুরী, অংশুমান কর প্রমুখ কবি-লেখকেরাও কবিতা বা ১৯ শব্দের গল্প নিজেদের হাতের লেখায় মেলে ধরেছেন। আলোকচিত্রী সাত্যকি ঘোষ ছবিতেও নানা বার্তা ফুটিয়ে তুলছেন। তিন সপ্তাহেই ৭০০ জন শিল্পী-লেখকের এক হাজারের বেশি ছবি-পোস্টার তৈরি। উত্তরণ বলছেন, ‘‘লন্ডন, আমেরিকা, হাঙ্গেরি, মুম্বই বা দিল্লির শিল্পী বন্ধুরাও আমাকে সাহায্য করছেন। বাছাই কাজগুলি এক জায়গায় জড়ো করা হচ্ছে। সেরা কাজগুলি অনলাইন প্রদর্শনীর পরে বিক্রিও করা হতে পারে। তাতে অনেক প্রতিভা ডানা মেলবে। সেই সঙ্গে থেকে যাবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকা এক ঐতিহাসিক সঙ্কটের দলিল।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)