শুভ্রা ঘোষদস্তিদার। ফাইল চিত্র।
দু’জন নয়। বেহালার শিশিরবাগানে খুন হওয়া বৃদ্ধা শুভ্রা ঘোষদস্তিদারের বাড়িতে কাঠের মিস্ত্রি সেজে ঢুকেছিল তিন জন। ওই ঘটনায় ধৃত এক অভিযুক্ত সাহেব ওরফে রঞ্জিত পোড়েল এমনটাই জানিয়েছে তদন্তকারীদের। শনিবার দফায় দফায় তাকে জেরা করা হয়। পুলিশের কাছে সাহেব দাবি করেছে, সুলতান নামে এক যুবক গলা টিপে খুন করেছে শুভ্রাদেবীকে। পেশায় রঙের মিস্ত্রি সুলতানের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় নিজের বাড়িতে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত নার্স শুভ্রাদেবী। সে দিন সকাল ১১টা নাগাদ বাড়ির পরিচারিকা অনেক ডেকেও বৃদ্ধার আওয়াজ পাননি। পরে প্রতিবেশী এক মহিলা এসে একাধিক বার কলিং বেল বাজিয়েও বৃদ্ধার সাড়া না পাওয়ায় তাঁর পুত্রবধূকে ফোন করে সব জানান। ঘণ্টাখানেক পরে প্রতিবেশীরা এসে দেখেন, শুভ্রাদেবীর বাড়ির দরজা হাট করে খোলা। সিঁড়ির মুখে পড়ে আছে তাঁর নিথর দেহ। গলায় গামছা ও ব্লাউজ দিয়ে ফাঁস দেওয়া। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছিল, লুটের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধাকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা সাহেবকে গ্রেফতার করা হয়। তবে শুভ্রাদেবীর খোয়া যাওয়া মোবাইল এবং গয়না এখনও উদ্ধার হয়নি।
ধৃতকে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেন ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) নীলাঞ্জন বিশ্বাস-সহ বেহালা থানার তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধার বাড়িতে রঙের কাজ আগেই হয়েছিল। বুধবার রঙের মিস্ত্রির সূত্র ধরেই সাহেব-সহ জনা চারেক ব্যক্তি এসেছিল কাঠের কাজ করতে। সাহেবকে জেরা করে পুলিশ আরও জেনেছে, শুভ্রাদেবীর ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনির গতিবিধি রীতিমতো নজরে রেখেছিল অভিযুক্তেরা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওই তিন জন যে বেরিয়ে যাবেন, সেটা তারা জানত। সে কারণে কাঠের কাজ করার ছলে তারা সাড়ে দশটার পরে শুভ্রাদেবীর বাড়িতে ঢোকে। জানলা দিয়ে বৃদ্ধা তাদের চিনতে পারার পরেই দরজা খোলেন।
তদন্তকারীদের দাবি, সাহেব জেরায় একাধিক বার সুলতানের নাম বলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সুলতানের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরে। তার বিরুদ্ধে চুরির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জেনেছে, বৃহস্পতিবার সকালে শুভ্রাদেবীকে খুন করার পরে সাহেব-সহ তিন জন একটি বাসে করে ডায়মন্ড হারবার রোডে আসে। তবে কোন রুটের বাসে এসেছিল, সে সম্পর্কে পুলিশকে কিছু জানাতে পারেনি ধৃত। যে রাস্তা ধরে তারা এসেছিল বলে সাহেব জানিয়েছে, ওই সব রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখছে পুলিশ।
এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ধৃত যুবকের কথা সত্যি না-ও হতে পারে। বৃহস্পতিবার ওই বৃদ্ধার বাড়িতে ক’জন এসেছিল, তা খতিয়ে দেখতে ধৃতের বয়ানের সঙ্গে রাস্তার সিসি ক্যামেরার ছবি মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। মূল অভিযুক্তের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।’’