ফাইল ছবি
‘৯৫, রাজডাঙা মেন রোড’।
পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ‘ইচ্ছে’ অনুষ্ঠান বাড়ির লেটারবক্সে লেখা রয়েছে এই ঠিকানাই। কিন্তু সেটি নাকি আদতে ওই অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একটি দোতলা বাড়ির ঠিকানা! ওই ঠিকানাটিই বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ইচ্ছে’র লেটারবক্সে— এমনই অভিযোগ সম্প্রতি জমা পড়েছে কসবা থানায়।
‘ইচ্ছে’র ঠিকানা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত কর কসবা থানা ও কলকাতা পুরসভার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির ঠিকানা ৯৫, রাজডাঙা মেন রোড। ইচ্ছে এন্টারটেনমেন্ট লিমিটেড বেআইনি ভাবে আমাদের ঠিকানা ব্যবহার করছে। এর বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত হোক।’’
ইডি-র তদন্তে ওই অনুষ্ঠান বাড়ির মালিক হিসাবে অর্পিতার নাম উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে সম্প্রতি ওই বাড়িটির বেআইনি নির্মাণও প্রকাশ্যে এসেছে। কসবা এলাকার রাজডাঙা মেন রোডে তিনটি আবাসিক প্লটকে ‘বেআইনি ভাবে’ একত্রিত করে বিশালাকায় ওই অনুষ্ঠান বাড়ি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় মেয়র ফিরহাদ হাকিম ইতিমধ্যেই কেএমডিএ-কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ৯৫, রাজডাঙা মেন রোডের বাসিন্দা রঞ্জিতের অভিযোগ, ‘‘ইচ্ছে অনুষ্ঠান বাড়ি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচারের পর থেকেই আমাদের পরিবারের সদস্যদের নানা ভাবে হেনস্থা হতে হচ্ছে। আমাদের দাবি, ওই লেটারবক্স থেকে ওই ঠিকানা মুছে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে বেআইনি ভাবে আমাদের ঠিকানা ব্যবহারের জন্য ইচ্ছে অনুষ্ঠান বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।’’
ইতিমধ্যেই অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। একই সঙ্গে রঞ্জিত কলকাতা পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগ ও মেয়র ফিরহাদের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, আদতে সাত কাঠা জমির উপরে ‘ইচ্ছে’ গড়ে উঠলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের খাতায় সেটিকে মাত্র ২ কাঠা ৯ ছটাক ফাঁকা জমি বলে দেখানো হয়েছে। কসবা এলাকার ইডি ব্লকের ‘ই’ সেক্টরের অন্তর্গত ১০, ১১ ও ১২ নম্বর আবাসিক প্লটকে একত্রিত করে ওই অনুষ্ঠান বাড়ি গড়ে উঠেছিল। নানাবিধ অনুষ্ঠানে ওই বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়, আবার সেখানে শুটিংও চলে। পুর নথি অনুযায়ী, ইডি ব্লকের ১১ নম্বর আবাসিক প্লটের ২ কাঠা ৯ ছটাক ফাঁকা জমি থেকে সম্পত্তিকর বাবদ বছরে মাত্র ২৩৫২ টাকা আদায় করে পুর প্রশাসন। কিন্তু কর রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, আদতে ওই বিশালায়তন অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে পুরসভার অন্তত এক লক্ষ টাকা সম্পত্তিকর হিসাবে পাওয়ার কথা। কর রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, পুরসভাকে অন্ধকারে রেখে তিনটি প্লটের সংযুক্তিকরণ করা মানেই ওই বাড়িটি বেআইনি।
অন্য দিকে, ইচ্ছে অনুষ্ঠান বাড়ির অদূরেই ৯৫, রাজডাঙা মেন রোড ঠিকানার দোতলা বাড়িটির মালিক হিসাবে পুরসভার খাতায় রয়েছে কৃষ্ণগোপাল করের, যিনি রঞ্জিতের বাবা। আবার এই ঠিকানায় কলকাতা পুরসভার লাইসেন্স বিভাগে কেব্ল টিভি অপারেটর রঞ্জিতের নামও নথিভুক্ত রয়েছে। তবে দীর্ঘ দিন ধরে অর্পিতার ইচ্ছে অনুষ্ঠান বাড়ি চললেও পুরসভার লাইসেন্সের খাতায় তার কোনও রেকর্ডই নেই! পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ইচ্ছে অনুষ্ঠান বাড়িটির পুরোটাই বেআইনি। পুরসভাকে অন্ধকারে রেখে মোটা টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পুরোটার তদন্ত চলছে।’’