কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা। —ফাইল চিত্র।
পথের বিধি মানা নিয়ে আশঙ্কা ছিলই। বড়দিন এবং বর্ষশেষের উৎসবে পথে বেরোনো জনতাকে আদৌ বিধি মানানো যাবে কি না, তা নিয়েও চিন্তা ছিল লালবাজারের কর্তাদের। সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ মিলেছে গত এক সপ্তাহে, পথবিধি ভাঙা সংক্রান্ত ঘটনায় লালবাজারের দেওয়া পরিসংখ্যানে। মত্ত অবস্থায় গাড়িচালকদের দাপটের পাশাপাশি উৎসবের নামে পথে বেরিয়ে সিগন্যাল না মানার ‘রোগ’ কার্যত ভয় ধরাচ্ছে। যা
নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সুর শোনা গেল শনিবার, কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মার গলায়।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বড়দিনের আগে থেকে শহরে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা
বেড়েছে। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর ভূরি ভূরি অভিযোগ এসেছে গত কয়েক দিনে। তার মধ্যে পুলিশের চিন্তা বাড়িয়েছে চালকদের একাংশের সিগন্যাল না মানার প্রবণতা। লালবাজার সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে সিগন্যাল না মানার কারণে ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা ছিল গড়ে প্রায় দু’হাজার। গত ২৩ ডিসেম্বর, সোমবার সিগন্যাল না মানায় মোট ২০৯৪টি মামলা রুজু হয়েছিল। পরদিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা ছিল ২০৩৯। বড়দিনে রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ নামিয়েও এই বিধিভঙ্গের প্রবণতা আটকানো যায়নি। ওই দিন ১৯৪৫ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার।
উৎসবের শহরে সিগন্যাল অমান্য করার এই ‘রোগের’ পাশাপাশি, সপ্তাহভর মত্ত চালকদের
দাপট দেখা গিয়েছে পথে। বড়দিনে অভিযান চালিয়ে ১০০ জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে লালবাজার। এ ছাড়া বড়দিনের আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার মত্ত চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা ছিল ৬২টি। সপ্তাহভর ধর্মতলা এবং শ্যামবাজার সংলগ্ন এলাকাগুলিতে মত্ত চালকদের সব থেকে বেশি দাপট ছিল বলে ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
শুধু পথের নিয়ম ভাঙাই নয়, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে চলতি সপ্তাহে। সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার সকালে শহরের দু’প্রান্তে দু’টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই বাইকচালকের। এ ছাড়া, সপ্তাহভর দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন একাধিক জন। ফলে রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ থাকার পরেও পথের বিধিভঙ্গ রীতিমতো ভয় ধরাচ্ছে। যদিও কড়া ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন নগরপাল। পাশাপাশি, বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন করা এবং রাস্তায় যাতে কারও অসুবিধা না হয়, সে দিকে নজর থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। নগরপালের কথায়, ‘‘মত্ত অবস্থায় অথবা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। আইন ভাঙলে চালকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’