প্রস্তুতি: ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতায় উচ্চ বাতিস্তম্ভ থেকে আলো নামিয়ে রাখা হচ্ছে। রবিবার, বেলেঘাটায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আমপানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে শহরকে যাতে দ্রুত স্বাভাবিক করা যায়, তার জন্য তিন জায়গায় প্রস্তুত থাকছে সেনাবাহিনী।
লালবাজার সূত্রের খবর, ফোর্ট উইলিয়াম, বালিগঞ্জ এবং বেহালায় সেনাবাহিনীর চারটি কলাম প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজনে সব রকমের পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন ওই সদস্যেরা। এ ছাড়াও ঝড়ের পরে বিধ্বস্ত শহরকে সচল করতে থাকছে এনডিআরএফের ন’টি দল। প্রতি দলে থাকছেন ৩০ জন করে সদস্য। পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছরের অবস্থার কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা। গত বছর পাঁচ দিন পরেও শহরের অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় সেনাবাহিনীকে নামাতে হয়েছিল।
এক বছর আগে ঘণ্টায় প্রায় ১১৪ কিলোমিটার বেগে আসা ঘূর্ণিঝড় আমপান তছনছ করে দিয়েছিল শহরকে। ভেঙে পড়েছিল প্রায় ১৫ হাজার গাছ। প্রাণ গিয়েছিল ১৯ জনের। এ বার ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার গতিতে ‘ইয়াস’ নামের অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুধবার রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় চিন্তিত পুলিশ-প্রশাসন। ঝড়ে বিধ্বস্ত শহরকে যাতে স্বাভাবিক রাখা যায়, তার জন্য লালবাজার আগেভাগেই সচেষ্ট হয়েছে।
রবিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার ইয়াস পরবর্তী প্রস্তুতি নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন পুর কমিশনার বিনোদ কুমার, কেএমডিএ-র সিইও অন্তরা আচার্য, সিভিল ডিফেন্সের ডিজি জগমোহন, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি কর্নেল পীযূষ দে। এ ছাড়া ছিলেন এনডিআরএফ, আরভিএনএল, সিইএসসি এবং পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিরা। সোমবার থেকে লালবাজারে ঝড় মোকাবিলায় যে বিশেষ কন্ট্রোল রুম হচ্ছে তাতে সব প্ৰতিনিধিরাই উপস্থিত থাকবেন।
সূত্রের খবর, আগামী কাল থেকে থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডের অধিকারিকদের নিজের নিজের এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ডিভিশনেই খোলা হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কন্ট্রোল রুম। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে সংস্থা যে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করে, গাছ পড়লে তারাই প্রথমে সরানোর কাজ শুরু করবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৈঠকে সিইএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে, ২৫০ জন গ্যাংম্যানের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে তাঁদের দু’জন করে প্রতিনিধি থাকবে ঝড় পরবর্তী অবস্থা সামলানোর জন্য। পুরসভার সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য এক জন করে পুলিশ অফিসার থাকবেন প্রতি বরো অফিসে। গাছ কাটতে হলে থানার তরফে পাওয়া খবর লালবাজার থেকে ওই অফিসারকে জানানো হবে। এর পরেই থানার সঙ্গে কথা বলে পুরসভার গাছ কাটার দল সেখানে যাবে।
লালবাজার জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে এ বার শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মঙ্গলবার থেকেই। গাছ কাটার জন্য দু’দফায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৪৪টি দল প্রতিটি ডিভিশন, পিটিএস এবং কিছু থানায় মজুত থাকবে যন্ত্রপাতি নিয়ে। প্রতি দলে থাকবেন পাঁচ জন করে পুলিশকর্মী। এক পুলিশকর্তার কথায়, গত বছর মূলত খবর পাওয়ার পরে পিটিএস থেকে বাহিনীকে পাঠানো হয়েছিল। তাতে সময় বেশি লাগছিল, একই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুরোধ আসার ফলে কাজে ব্যাঘাত ঘটেছিল। এ বার তাই শহরের অলিগলিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার ঝড় নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পুলিশ কমিশনার। পরিস্থিতির কথা বিচার করে তিনি কার্যত সে দিন থেকেই বাহিনীকে ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় নামিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে শহরের উচ্চ বাতিস্তম্ভের আলো নামানো এবং হোর্ডিং খোলার কাজ প্রায় শেষ। সেই সঙ্গে থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডগুলি জেনারেটর জোগাড় করেছে লোডশেডিংয়ের কথা মাথায় রেখে। শুধু তা-ই নয়, থানা এবং ট্র্যাফিক গার্ডগুলি নিজেরাই গাছ কাটার জন্য দল তৈরি করে যন্ত্রপাতি জোগাড় করছে।
এক শীর্ষকর্তার কথায়, গত বছর ঝড়ের পরে পুরসভা এবং সিইএসসি-র মতো সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব থাকায় পুলিশকে সব চেয়ে বেগ পেতে হয়েছিল। ফল ভুগেছিল শহরবাসী। এ বার তেমন যাতে না হয়, তাই বিপর্যয় সামলানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সংস্থাগুলিকে নিয়ে আগেই প্রস্তুত হচ্ছে লালবাজার।